সরকারি বেসিক ব্যাংককে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার খবরে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) অর্থমন্ত্রীর কাছে এ বিষয় স্মারকলিপি দিয়েছেন বেসিক ব্যাংকের কর্মীরা। বেসরকারি খাতের ব্যাংক নয়, সরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, বেসিক ব্যাংক লিমিটেড শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক। ক্ষুদ্র শিল্প বিকাশে অর্থায়নের বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি দীর্ঘদিন অত্যন্ত সুনামের সাথে দেশের মানুষকে সেবা দিয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই দেশের চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ-তরুণীদের জন্য এই ব্যাংকের চাকরি ছিল স্বপ্নের মতো। ফলে এই ব্যাংকে উচ্চ শিক্ষিত ও সপ্রতিভ তরুণ-তরুণীদের সমাবেশ ঘটেছে যারা ব্যাংকটিকে একটি শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিল। সরকারি খাতের একটি প্রতিষ্ঠান হয়েও এটি ছিল একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান যা এর কর্মীদের জন্য ছিল অনেক গর্বের।
বেসিক ব্যাংকের সাফল্যে আমরা অনেকে পুরনো ব্যাংক ছেড়ে বেসিক ব্যাংকে যোগদান করি। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির উত্তরাধিকারীগণ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের একটি মডেল আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে এই ব্যাংকে যোগদান করেছে এবং একটি অনাড়ম্বর কিন্তু সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায় সর্বদাই আশ্বস্ত বোধ করেছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে মোটামুটি সচ্ছল জীবন যাপনের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
এই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহজ জীবন যাপনে অভ্যস্ত। এমনকি বেতন ভাতাদি কমে যাওয়ার পরেও কেউ সততার পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি। বরং এই ব্যাংকটিকে আঁকড়ে ধরে একে দুরবস্থা থেকে বের করে আনার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। আমরা আমাদের দুর্দশা সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে উঠতে না পারলেও ব্যাংকের অনেক সূচকের উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। ব্যাংকের আর্থিক দুর্দশা স্বত্বেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পেমেন্ট পরিশোধসহ বিভিন্ন সময় দেশব্যাপী সরকারের উন্নয়ন কাজের সহযোগী হয়েছি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে সম্ভাব্য সহযোগিতা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর ছিলাম, এখনও আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। বেতন-ভাতার ক্ষতিও তো আমরা মেনে নিয়েছিলাম ব্যাংকের স্বার্থে, শুধুমাত্র জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তার কথা বিবেচনা করে। তবে মন্ত্রী, সরকারি খাতের বেসিক ব্যাংককে বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের সংবাদে আমরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে বলে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে।
বেসিক ব্যাংকের কর্মীরা জানান, দেশের আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও আর্থিক খাতকে প্রভূত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় ব্যাংক একীভূতকরণের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। সেক্ষেত্রে বেসিক ব্যাংককে মূল ধারার অপর একটি সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হলে সকল বিবেচনায় তা হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে আমাদের অর্থাৎ ব্যাংকের সব কর্মীর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাও দূর হবে।
এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি খাতের বেসিক ব্যাংককে মূল ধারার অপর একটি সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার দাবি করেছে বেসিক ব্যাংকের কর্মীরা।
সোমবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন উপস্থিততে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক একীভূত করার বিষয় জানানো হয়।
এর আগে গত ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পর্ষদকে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তারপর সিটি ও বেসিক ব্যাংকের পর্ষদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দুই ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। ব্যাংক দুটি একীভূত হলেও আগামী তিন বছর পৃথক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করবে।