গাজীপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির কাছে অভিযোগ দিয়ে বেকায়দায় এক প্রবাসী পরিবার

Slider বাংলার মুখোমুখি


গাজীপুর প্রতিনিধি: জমি সংক্রান্ত বিষয়ে জিএমপি পুলিশের অবৈধ হস্তক্ষেপ ও মিথ্যা মামলায় হয়ারানি থেকে বাঁচতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও হয়রানির মাত্রা আরো বহুগুণ বেড়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বর্তমানে প্রকাশ্যেই পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের ওই জমি জোরপূর্বক জবরদখলের চেষ্টা চলছে অভিযোগ এনে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

টঙ্গীর একটি ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য সাবেক অধ্যক্ষ মিয়া হোসেন রানা লিখিত বক্তব্যে জানান, গাজীপুর সদর থানার দাক্ষিণখান মৌজায় প্রায় ত্রিশ আগে তার পিতা ২০০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে ৭০ শতাংশ বিক্রি করে দেন। বর্তমানে অবশিষ্ট ১৩০ শতাংশ জমিতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে তারা ভোগদখলে নিয়োজিত। প্রায় ৫ বছর আগে ভারতীয় একটি কোম্পনিকে ওই জমির কিছু অংশ তার পিতা ভাড়াও দেন। সম্প্রতি বেনজির নামে পুলিশের এক সোর্স বায়নাসূত্রে ওই জমির মালিকানা দাবি করে জিএমপি সদর থানা পুলিশের উপস্থিতিতে জোরপূর্বক সাইনবোর্ড টানায় এবং মাপজোক করে। রানা বলেন, ওই সময় আমরা বাধা দেওয়ায় আমাদের নামে সদর থানায় মারামারির মিথ্যা মামলা দেয়। ওই মামলায় বিদেশে অবস্থানরত (ইউরোপের একটি দেশের নাগরিক) আমার ভাইকেও আসামী করা হয়। এর পর বিবাদীরা আমাদের জমির টিনের বাউন্ডারি ভেঙ্গে ফেলে দেয়। আমরা আদালত থেকে জামিনে এসে ওই বাউন্ডারি পুন:নির্মাণের জন্য জমিতে এক গাড়ি ইট নিয়ে আসি। পরে সদর থানা পুলিশ আমাদের ওই ইট বোঝাই ট্রাক থানায় নিয়ে যায় এবং আমাদের নামে থানায় আরেকটি মিথ্যা মামলা রুজু করে। রানা বলেন, সর্বশেষ মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় আমাকে গ্রেফতারের জন্য জিএমপির বিপুল সংখ্যক পুলিশ গত ১৭ জানুয়ারি রাতে আমার উত্তরার বাসায় গিয়ে তল্লাশি চালায়। সেখানে আমাকে না পেয়ে গাজীপুর শহরে আমাদের বাড়ির প্রতিটি ফ্লোরে ভাড়াটিয়াদের রুমে তল্লাশি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এতে আমার ৯০ বছরের বৃদ্ধ পিতা ভয়ে স্টোক করেন। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে আছেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রানা বলেন, পুলিশের সোর্স বেনজিরের নামে মূলত: পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ওই জমিটি বায়না করেছেন বলে আমরা পরস্পর জানতে পেরেছি। জিএমপি পুলিশ কমিশনারও আমাকে জমিটি মেপে বিবাদীদেরকে বুঝিয়ে দিতে বলেছেন। এতে উপায়ন্তর না পেয়ে জমিটি রক্ষায় আমরা গাজীপুর দেওয়ানি আদালতে মামলা করি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিই। এতে পুলিশ আমাদের প্রতি আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়। বর্তমানে পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জমিটি জবরদখলের তোরজোর চলছে। গত রোববার রাতেও পুলিশের উপস্থিতিতে বিবাদীরা জমিতে ইট এনে তরিগড়ি বাউন্ডারি নির্মাণের চেষ্টা চালায়।

জমির মালিকানা সংক্রান্তে এক প্রশ্নের জবাবে মিয়া হোসেন রানা বলেন, আমাদের মালিকানা সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক। আমাদের সংশ্লিষ্ট দাগে (আরআস দাগ নং-৩৬১) জমির পরিমাণ মোট ১৮০ শতাংশ। যা বিগত ১৯৯৯ সালে আমার পিতার নামে নামজারি জমাভাগ (খারিজ) করা। কিন্তু পরবর্তীতে ভূমি অফিস ওই একই দাগে এ পর্যন্ত সর্বমোট আরো ২৮৯.৫ শতাংশ জমি খারিজ দেয়। তাদের ওই দাগে মোট ১৮০ শতাংশ জমির স্থলে ভূমি অফিস আরো অতিরিক্ত ১০৮.৫ শতাংশ অর্থাৎ সর্বমোট ২৮৯.৫ শতাংশ খারিজ কিভাবে দিয়েছে এব্যাপারেও খোঁজ খবর নেয়ার জন্য তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান। পুলিশের কথিত সোর্স বেনজিরের নামে যাদের কাছ থেকে ওই জমি বায়না করা হয়েছে তাদের পূর্ব পুরুষরা বহু বছর আগেই নিজেদের প্রাপ্য অংশের চেয়ে আরো বেশি জমি বিক্রি করে নি:সত্ববান হয়েছেন দাবি করে রানা বলেন, আমাদের প্রথম খারিজ বহাল থাকা সত্বেও জালজালিয়াতি ও তঞ্জকতার আশ্রয় নিয়ে বিবাদীদের নামে সর্বশেষ ২০২২ সালে ওই একই দাগে আরো অতিরিক্ত জমি খারিজ দেখানো হয়েছে। যার কোন ভিত্তি ও কার্যকারিতা নেই।

এদিকে এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ-জিএমপি কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, মিয়া হোসেন রানাদের মালিকানা কেউ অস্বীকার করছে না। তবে তাকে জমি মাপতে বললে তিনি মাপ এড়িয়ে যাচ্ছেন, সেজন্য তাদের মালিকানা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পুলিশের হস্তক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের তো আইনের ভেতরেই রয়েছে। বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। রানার বাবা জমি বিক্রি করে গেছেন, সেই জমি তারা এখনো কাগজ ছাড়া দখলে রেখেছেন, এটা কি ঠিক ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *