দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। আসন্ন এই ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে জমে উঠতে শুরু করেছে জামাকাপড় ও পাঞ্জাবি-টুপিসহ ঈদের বাজার। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছোট-বড় মার্কেট, বিপণী বিতান ও ফুটপাতে ভিড় করছেন মানুষজন। তবে ঈদকে ঘিরে কেনাকাটার এই জমজমাট চিত্র যেন অনেকটাই ফ্যাকাশে জুতার দোকানগুলোতে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবারের ঈদে জুতার কেনাকাটা এখনো জমে উঠেনি। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, মাসের শেষ হওয়ায় এখনো বেতন-বোনাস মেলেনি সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের। এমনকি বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মানুষের অর্থনৈতিক সংকটও দায়ী হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা এলাকার বিভিন্ন জুতার শোরুম ও দোকান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, ঈদকে ঘিরে বেচাকেনা একদমই নেই। ইফতারের পরে যা দুয়েকজন ক্রেতা আসছে, তাও কিনছে না। আর যা বিক্রি করছি তা বলার মতো না। আমরা আশায় আছি ২০ রোজার পর বিক্রি বাড়বে। এখন ক্রেতা নেই বললেই চলে। যারাই আসছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দাম শুনে চলে যাচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ এলাকার লোটো শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল শোরুমে মাত্র দুইজন ক্রেতা ঘুরে ঘুরে জুতা দেখছেন। তাদের মধ্যে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী আসিফ। তিনি বলেন, আজ মার্কেটে প্রথম এলাম। এখন কিনব না, আরও পরে কিনব। মাকের্ট দেখতে এসেছি। পাঞ্জাবি-পাজামা কেনা হলে সে অনুযায়ী জুতা কিনব।
জুতা পছন্দ হয়েছে কি-না জানতে চাইলে আসিফ বলেন, পছন্দ হয়েছে। কিন্তু দাম একটু বেশি। তবু কী আর করার, সামনে ঈদ। জুতা তো কিনতে হবেই।
ঈদের বেচাকেনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লোটো শোরুমের ইনচার্জ রাসেল মাহমুদ মিল্টন বলেন, গত বছর রোজার এই সময়ে যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছিল, এবার আজ পর্যন্ত সে রকমটা হয়নি। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আমরা সর্বোচ্চ ২৬ পার্সেন্ট পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিচ্ছি, তারপরও ক্রেতা নেই বললেই চলে।
কেনাকাটার বেহাল অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বছর দ্রব্যমূল্য তুলনামূলক অনেক বেশি। অধিকাংশ মানুষেরই এখন ঢাকায় থেকে খেয়ে-পড়ে জীবন চালাতে হাঁসফাঁস অবস্থা। আরেকটি কারণ হতে পারে মাসের শেষ দিক হওয়ায় এখনো বেতন-বোনাস হয়নি, যে কারণে মানুষ এখনো কেনাকাটায় তেমন আসছে না। আশা করছি রোজার শেষ সপ্তাহে কেনাকাটা কিছুটা বাড়বে।
মৌচাক এলাকার বাটা আউটলেটে গিয়ে দেখা যায়, নির্দিষ্ট কিছু জুতায় ৩০ শতাংশ ছাড় চলছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন কার্ডেও আছে বিভিন্ন পরিমাণের ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার। এই আউটলেটেও দেখা যায়নি উল্লেখযোগ্য কোনো ক্রেতা। গ্লাস ঠেলে একজন ক্রেতা ভেতরে ঢুকতেই তাকে ঘিরে ধরছেন একাধিক বিক্রয়কর্মী।
এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এবারের ঈদটা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন হচ্ছে। অনেক দেখেশুনে, দামদর দেখে তারপর কেনাকাটা করতে হচ্ছে। বাজারে দ্রব্যের যে দাম, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে চাইলেও দামি জুতা কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, বেচাকেনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেখানকার বিক্রয়কর্মী জানান, বেচাকেনা তেমন শুরু হয়নি এখনও। ক্রেতা এসে ঘুরে যাচ্ছে। ঈদ যত সামনে আসবে, বেচাকেনা ততো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাটা আউটলেটের ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের কেনাকাটা এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক নয়। ক্রেতারা খুবই কম আসছে। যারাই আসছে, কমদামি জুতাই বেশি খুঁজছে। দামি জুতার ক্রেতা এবার খুবই কম পাচ্ছি।
ক্রেতা সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর রোজাটা এমন একটা সময় শুরু হয়েছিল যে, বেতন-বোনাসের কারণে ঈদের কেনাকাটায় সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার এমন একটা সময়ে শুরু হলো যে, চাকরিজীবীরা এখন পর্যন্ত বেতনই তুলতে পারেনি। আবার এমন একটা সময়ে পাবে, যখন কেনাকাটার সময় থাকবে খুবই কম। আশা করছি নতুন মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে ক্রেতার ভিড় বাড়বে।
রামপুরা বাজার এলাকায় ভাইব্রেন্ট শোরুমে গিয়েও জুতা-স্যান্ডেলে নানারকম অফারের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। নির্দিষ্ট কিছু জুতায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ছাড়াও বিভিন্ন কার্ডে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার চলতে দেখা গেছে। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশই দেখতে এসেছেন, অন্যান্য কেনাকাটা শেষে তারা জুতা কিনবেন।
নতুন পোশাকের সঙ্গে কেমন জুতা চাই, এমন প্রশ্নের জবাবে ইশরাত জাহান নামক এক ক্রেতা বলেন, পোশাকের রং আর ডিজাইনের সঙ্গে মিল রেখে জুতা কেনার চিন্তা রয়েছে। আপাতত জুতা কিনছি না। আগে বাচ্চাদের পোশাক কিনব, তারপর নিজের পোশাক ও জুতা।
ভাইব্রেন্ট শোরুমের ম্যানেজার দিপু হোসেন বলেন, ঈদ যত সামনে আসছে, কেনাকাটাও তত বাড়তে শুরু করেছে। শুক্রবার অফিস ছুটি ছিল, তাই কেনাকাটাও মোটামুটি বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে আশা করছি কেনাকাটা আরও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, এবারের ঈদ বাজারে গত কয়েক বছরের মতোই দেশীয় ব্র্যান্ডের চেয়ে খানিকটা এগিয়ে আছে চীন, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা জুতা-স্যান্ডেল।
এক শ্রেণির ক্রেতা দেশীয় জুতা-স্যান্ডেল পছন্দ করলেও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা সব সময়ই ভিড় করে ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে। তবে এখন পর্যন্ত জুতার দোকানগুলোতে তেমন বেচাকেনা জমে উঠেনি।