ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বহুল আলোচিত আবগারি দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার রাউজ অ্যাভিনিউ আদালতে তোলা হয় তাকে। সেখানে ১০ দিনের জন্য কেজরিওয়ালকে হেফাজতে নেয়ার অনুমতি চায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তবে ২৮ মার্চ পর্যন্ত কেজরির ইডি হেফাজত মঞ্জুর করছেন আদালত।
শুক্রবার আদালতে তোলার সময় সংবাদমাধ্যমকে কেজরিওয়াল জানান, ‘আমি নিজের জীবন দেশের জন্য উৎসর্গ করেছি। জেলের মধ্যে থাকলেও দেশসেবার কাজ জারি থাকবে।’
এদিন মামলার শুনানিতে কেজরির আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেছিলেন, আবগারি দুর্নীতি মামলায় যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের ৫০ শতাংশ কেজরির নাম নেননি। ৪২ শতাংশ কেজরির সাথে কোনো আর্থিক লেনদেনের কথা স্বীকার করেননি। এভাবে কোনো কারণ ছাড়া গ্রেফতার করা যায় না।
অতীতের প্রসঙ্গ টেনে সিংভি বলেন, কেজরির অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদনের পর ইডির বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন আদালত। কিন্তু ইডির তরফে জবাবদিহিতে সময় চাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রেফতার করা হয় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। ইডি প্রমাণ করুক এই গ্রেফতারির কী প্রয়োজন ছিল? এদিকে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারির পরই প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানী। আগামী ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবন ঘেরাও অভিযানের ডাক দিয়েছে আপ।
স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গ্রেফতার হলেন কেজরিওয়াল। এর আগে ঝাড়খণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও গ্রেফতার করে ইডি। তবে গ্রেফতারির আগে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারির পরেই তার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আম আদমি কর্মী-সমর্থকেরা। গোটা রাজধানী জুড়েই প্রতিবাদ শুরু করেন তারা।
সূত্র জানায়, ১২ জনের ইডির একটি দল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে আসেন। তারা তল্লাশির জন্য প্রয়োজনীয় নথি দেখিয়েই কেজরিওয়ালের বাড়িতে প্রবেশ করেন। এ সময় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে মোতায়েন করা হয় পুলিশ। অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জামিন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন কেজরিওয়াল। জরুরি ভিত্তিতে মামলা শোনার জন্য আবেদন করেন। তবে সেই শুনানি হয়নি বৃহস্পতিবার। শুক্রবার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার বিচারপতি সুরেশকুমার কাইথ এবং বিচারপতি মনোজ জৈনের ডিভিশন বেঞ্চে কেজরিওয়ালের আবেদন সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। শুনানি শেষে ডিভিশন বেঞ্চ বলেন,‘আমরা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। তবে আমরা এই পর্যায়ে মামলাকারীকে কোনো সুরক্ষা দেয়ার কথা দিচ্ছি না।’ এরপরই তৎপর হয় ইডি।
দিল্লির মদ নীতি কেলেঙ্কারির মামলায় আম আদমি পার্র্টির প্রধানকে মোট ৯ বার সমন পাঠায় ইডি। কিন্তু আট বারই হাজিরা এড়িয়ে যান তিনি। শেষ বার পাঠানো সমনে বৃহস্পতিবার ইডি দফতরে হাজিরা দেয়ার কথা ছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু হাজিরা না দিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কেজরিওয়াল। হাই কোর্ট তা খারিজ করলে সুপ্রিম কোর্টে যান তিনি। আদালতে পেশ করা আবেদনে কেজরিওয়াল বলেন,‘ইডি নিশ্চয়তা দিক, তাদের তলবে সাড়া দিলে আমার বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে না।’
আম আদমির অভিযোগ ছিল, ইডির লক্ষ্য জিজ্ঞাসাবাদ নয়। এত দিন ধরেও তারা এই মামলায় কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কোনো তথ্যপ্রমাণ পায়নি। তাই লোকসভা ভোটের আগে সমন পাঠিয়ে তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।
এ মামলায় বিআরএস নেত্রী কবিতাকে কয়েক দিন আগেই গ্রেফতার করে ইডি। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে ইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। কবিতা ছাড়াও এই মামলায় এখন পর্যন্ত আম আদমি পার্টির দুই প্রবীণ নেতা সিসৌদিয়া এবং আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংহ গ্রেফতার হয়েছেন। রয়েছেন তিহাড় জেলে। অভিযোগ ওঠে, দিল্লি সরকারের ২০২১-২২ সালের আবগারি নীতি বেশ কিছু মদ ব্যবসায়ীকে সুবিধা করে দিচ্ছিল। এই নীতি প্রণয়নের জন্য যারা ঘুষ দিয়েছিলেন, তাদের সুবিধা করে দেয়া হচ্ছিল। আপ সরকার সেই অভিযোগ মানেনি। সেই নীতি যদিও পরে খারিজ করা হয়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা ও অন্যান্য