ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল রাজস্ব দফতরের এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্টের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে টার্গেট করতে শুরু করেছে এই রাজ্যের বিজেপি। তারা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে শিগগিরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নম্বর আসবে! রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘যতই করো কান্নাকাটি, মাফলারের পর হাওয়াই চটি।’
এ নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে তারা। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এ সব কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে বিজেপি কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে চালাচ্ছে। সুকান্তবাবুকে বলব, এসব না ভেবে আগে বালুরঘাট সামলান। প্রাক্তন এমপিদের লেটার হেড ছাপিয়ে রাখুন।’
উল্লেখ্য, মমতার হাওয়াই চটি-প্রীতি পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে কারোরই অজানা নয়। মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের নীল-সাদা হাওয়াই চটিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে ভোটের সময় ঢালাও প্রচারও করে তৃণমূল। অন্য দিকে, জাতীয় রাজনীতিতে ‘মাফলার ম্যান’ বলেই পরিচিত কেজরিওয়াল। দিল্লির বিধানসভা ভোটের সময় আপেরও স্লোগান হয়, ‘মাফলার ম্যান ফিরছেন’।
লোকসভা নির্বাচনের মুখে গ্রেফতার হয়েছেন আপ নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। আবগারি দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেফতার করেছে ইডি। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী অতিশী মারলেনার বক্তব্য, গত দু’বছর ধরে আবগারি দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছেন অন্তত ৫০০ কর্মকর্তা। তার পরও এখনও পর্যন্ত এক টাকা উদ্ধার করতে পারলেন না তারা! কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল-সহ বাকি বিরোধী দলগুলো।
পাল্টা বিজেপির বক্তব্য, দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকলে গ্রেফতার হতেই হবে। সুকান্ত বলেন, ‘আবগারি দুর্নীতি মামলায় আগেই দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন। দু’দিন আগেই ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) নেত্রী তথা তেলঙ্গানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়েক কন্যা কে কবিতাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তখনই বোঝা যাচ্ছিল, এবার কেজরিওয়ালের দিকে যাচ্ছে ইডি। যেসব মুখ্যমন্ত্রীদের নাম দুর্নীতিতে জড়িয়েছে, তাঁরা সাবধান থাকুন। এই ঘটনা প্রমাণ করে দিলো যে কর্মরত মুখ্যমন্ত্রীরাও দুর্নীতিতে গ্রেফতার হতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গেও আমরা এই দৃশ্য দেখতে পারি।’ এর পরেই পশ্চিমবঙ্গের কথা টেনে সুকান্ত বলেন, ‘আমার তো মনে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তার ভাইপোর ভাগ্য ভালো যে তারা এখনো জেলের বাইরে রয়েছে। ওদের ভাগ্য ভালো বলতে হবে।’
উল্লেখ্য, কেজরির গ্রেফতারি নিয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভা এমপি ডেরেক ও’ব্রায়েন এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘ভোটপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তার পরেই এই ঘটনা! বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা, মুখ্যমন্ত্রী, নির্বাচনী এজেন্ট, কর্মীদের হেনস্থা গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী?’
ডেরেক আরো লিখেছেন, ‘বেআইনি অধ্যাদেশ জারি করে তার (কেজরির) প্রশাসনিক ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগেই যদি এভাবে মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেফতার করা হয়, কিভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব? সুপ্রিম কোর্ট এবং নির্বাচন কমিশন যদি এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, বিজেপির এই প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে কে রুখে দাঁড়াবে?’ ডেরেকের এক্স হ্যান্ডলের এই পোস্টটি শেয়ার করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জিও।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে লিখেছেন, ‘একজন ভীত স্বৈরচারী শাসকই চায় মৃত গণতন্ত্র তৈরি করতে। মিডিয়াসহ সব প্রতিষ্ঠান দখল, দল ভাঙা, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে চাঁদা তোলা, প্রধান বিরোধী দলের তহবিল কেড়ে নেয়া যথেষ্ট ছিল না, এখন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীদেরও গ্রেফতার করতে শুরু করেছে। ভারতবাসী এর উপযুক্ত জবাব দেবেন।’
কেজরির গ্রেফতারিকে ‘লজ্জাজনক ও অসাংবিধানিক’ বলেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢ়রা। নিন্দা করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, এসপি প্রধান অখিলেশ যাদব।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা