গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত, চাহিদা কমেছে মুড়ির, বেড়েছে চিড়ার

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


গাজীপুর: গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ধান-চালের মূল্য বৃদ্ধি এবং গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে গাজীপুরের শিল্পনগরী টঙ্গীতে মুড়ি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় টঙ্গীর ৫টি চিড়া-মুড়ি কলের ২টির ইতিমধ্যে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সরবরাহ কম হওয়ায় ভোক্তারা এখন মুড়ির দিকে ঝুঁকছে কম। তাই মুড়ির পরিবর্তে চিড়ার চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।

সোমবার (১৮ মার্চ) সরেজমিন টঙ্গীর বিভিন্ন চিড়া-মুড়ি কল ও পাইকারী বাজার ঘুরে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, রমজানের ইফতারে মুড়ি একটি প্রধান অনুষঙ্গ হলেও চাহিদা কমেছে কয়েকগুণ। চিড়া-মুড়ি কল মালিক, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের তথ্যমতে, ধান-চাল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় মুড়ি উৎপাদন প্রায় বন্ধের পথে। ফলে খুচরা বাজারে পর্যাপ্ত মুড়ির সরবরাহ না থাকায় ভোক্তারা বেশী মূল্যের মুড়ির পরিবর্তে চিড়া বা ইফতারের অন্যান্য অনুষঙ্গের প্রতি ঝুঁকছে। টঙ্গী মিলগেট মিতালী চিড়া কল, গাউসিয়া মুড়ির মিল, টঙ্গীবাজার মদিনা মার্কেটের সুলতান ট্রেডার্স, চাচা-ভাতিজা চিড়ামুড়ি ষ্টোর, রাশেদ চিড়ামুড়ি এন্ড গুড় ট্রেডার্স, বরিশাল মুড়ি ষ্টোর, কুমিল্লা মুড়ি ট্রেডার্স, ফারুক মুড়ি ষ্টোর, বিল্লাল মুড়ি ষ্টোর, তানভীর ট্রেডার্সসহ প্রায় ১৬টি মুড়ির আড়ৎ থেকে ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩৫ টন মুড়ি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে চাহিদা থাকলেও কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা দাম বাড়ায় ক্রেতাদের স্বস্তি নেই মুড়িতে। দাম বৃদ্ধি ও ভেজাল মুড়ির কারণে ক্রেতারা এখন মুড়ির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। এছাড়া রোজায় মানহীন ও নিম্নমানের ভেজালযুক্ত মুড়িতে বাজারের অলিগলি সয়লাব। দানা বড়, সাদা ও চকচকে করতে মুড়িতে হাইড্রোজ ও ইউরিয়া মেশানোর অভিযোগ রয়েছে। এই হাইড্রোজ ও ইউরিয়া মিশ্রিত মুড়ি খেয়ে ভোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরজমিন টঙ্গী বাজার ঘুরে জানা গেছে, সারাবছরে মুড়ির যে পরিমান চাহিদা থাকে তার ৭০ শতাংশ প্রয়োজন হয় শুধু রমজান মাসে। মানভেদে প্রতিকেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০-১৪০ টাকায়। বরিশালের হাতে ভাজা ‘মুথামুড়ি’ বা ‘ঘিকজ’ মুড়ি পাইকারী দরে প্রতিকেজি ১৩০-১৪০টাকা, ‘১৬ মুড়ি’ প্রতি কেজি ৭২-৭৫টাকা এবং মেশিনে তৈরি ‘হাইসুপার’ প্রতিকেজি ৮৪ টাকা ও ‘সুপার’ মুড়ি প্রতিকেজি ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুড়ি উৎপাদনকারীরা বলছেন, রমজানকে উপলক্ষ্য করে দেশের প্রতিটি জেলায় স্থানীয়ভাবে মুড়ি তৈরি করে তা বাজারজাত করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। টঙ্গীর আড়ৎদাররা মেশিনে ভাজা মুড়ি বেশি বিক্রি করলেও হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা আগের চেয়ে বেশি। সচেতন নাগরিকগণ মেশিনে তৈরি হাইড্রোজ ও ইউরিয়া মিশ্রিত মুড়ির চেয়ে হাতে তৈরি মুড়ি খেতে স্বস্তি বোধ করেন। তবে দেশের বিশাল একটি শ্রেণি মেশিনে ভাজা কমদামী মুড়ির উপর নির্ভর করে থাকেন। এতে হাতে ভাজা মুড়ির চেয়ে মেশিনে ভাজা কমদামী মুড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি।

টঙ্গী বাজারে মুড়ি ক্রয় করতে আসা জাকির হোসেন বলেন, বাজারে মুড়ি কম আবার দামও বেশী। তাই মুড়ির পরিবর্তে চিড়া নিলাম।

টঙ্গী বাজার তানভীর ট্রেডার্সের মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, রমজানে মুড়ির চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে। তবে এবার মুড়ির চাহিদা অনেকটা কম।

মিলগেট মিতালী চিড়াকলের মালিক নুরুল করিম পারভেজ বলেন, প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকা গ্যাস বিল দেই কিন্তু গ্যাস পাইনা বললেই চলে। এছাড়া চাল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় মুড়ি উৎপাদন আপাতত বন্ধ রেখেছি।

গাউসিয়া মুড়ির মিলের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, এবারের রমজানে মুড়ির চাহিদা অনেক কম। মুড়িতে কেন ক্যামিকেল মেশানো হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চকচকে ও সাদা করতে মুড়িতে সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড, ইউরিয়া ও কাস্টার্ড পাউডার মেশানো হয়। আমরা চেষ্টা করি ক্যামিকেল ছাড়া মুড়ি উৎপাদন ও বিক্রি করতে।

এব্যাপারে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইউরিয়া সার ও হাইড্রোজের মত ক্ষতিকারক উপাদান মিশ্রিত মুড়ি খেলে লিভার ক্যানসার, হেপাটাইটিস, খাদ্য নালীর ক্যানসার, অম্লসার ব্যাথা ও আলসারের মত মারাত্মক ক্ষতসহ মানব দেহে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *