আঞ্চলিক প্রতিনিধি গাজীপুর: আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। দিবসটি উপলক্ষে দেশে গতকাল থেকেই নানা কর্মসূচি পালন শুরু হয়েছে। তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী রক্ষায় একাধিক সংগঠন থাকলেও আজকে তাদের কোন কর্মসূচি চোখে পড়ছে না। রাজধানী ঢাকার চারপাশে থাকা চারটি নদীর মধ্যে দখল দুষনে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে তুরাগ। এরপর শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী। বুড়িগঙ্গা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থিত হওয়ায় নদী রক্ষা আন্দোলনে বুড়িগঙ্গা এগিয়ে থাকে।
জানা যায়, ১৯৯৮ সাল থেকে সারাবিশ্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৯৭ সালের মার্চে ব্রাজিলের কুরিতিয়া শহরে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সমাবেশ থেকে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশে আজ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে বিভিন্ন সংস্থা।
আজ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন, নোঙ্গর ট্রাস্ট, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, নদী পরিব্রাজক দল, বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিডিপি), নদী রক্ষা জোট, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) ও গ্রিন ভয়েস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যৌথ উদ্যোগে ‘বুড়িগঙ্গা নদীর বর্তমান অবস্থা সরজমিনে পরিদর্শন কর্মসূচির’ আয়োজন করেছে।
এদিকে গতকাল বুধবার (১৩ মার্চ) সরেজমিন তুরাগ নদীর তীর ঘুরে দেখা যায় হৃদয় বিদারক দৃশ্য।
টঙ্গী নদী বন্দরের ইনচার্জ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম মিয়া জানান, তুরাগ ও বালু নদীর ২২ কি: মি: এলাকা তার অধীন। নদী দখলের অভিযোগে এই পর্যন্ত ১৬ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, তুরাগ নদীর মাছিমপুর এলাকায় বিআইডব্লিউটিএর পুঁতা খুঁটি অনেক জায়গায় অদৃশ্য, আবার কোথাও খুঁটিই নেই । আবার খুঁটি আঁড়াল করে নদীর জায়গায় গড়ে উঠছে কলকারখানা, গোডাউন, বাগান বাড়ি বা কোথাও খুঁটির নীচে মাদকের দোকান। হাজী মাজার বস্তি এলাকায় খুঁটির নীচে মাদকসেবীরা দেদারসে মাদক সেবন ও মাদক বিক্রি করছে।
মাছিমপুর এলাকায় বিআইডব্লিউটিএর খুঁটি ভেঙে তুরাগ নদীর তীর দখল চলছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা বসিয়ে দখল করছে তুরাগ নদীর তীর। চলছে নদী ভরাট। বিঘা বিঘা জমি তারা দখল করছে নানা অজুহাতে। মাছিমপুর- কামার পাড়া ঘাটের একটু উত্তর দিকে নদী ভরাট কাজ চলছে। হয়ত আর কিছু দিন পর এই ঘাটে আর খেয়া নৌকা লাগবে না। মানুষ মাটির বাঁধ দিয়েই তুরাগ নদী পাড় হতে পারবে। পাঁয়ে হেঁটে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ঢাকার কামার পাড়া যেতে সময় লাগবে এক মিনিট। এই সকল জবরদখল কাজ করছে একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে আনন্দ গ্রুপের প্রধান প্রকৌশলী সুশীল চন্দ্র বলেন, নদীর জায়গা আমরা ছেড়ে দিয়েছি। খুটির বিষয়ে তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএর অনুমতিক্রমে আমরা খুঁটি সরিয়েছি।
এ বিষয়ে হামি গ্রুপের ব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আমি আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দিতে পারব না। তবে আমরা নদী দখল করিনি।
এ বিষয়ে টঙ্গী নদী বন্দরের ইনচার্জ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম মিয়া জানান,আমাদের খুঁটি অন্যরা সরাতে পারে না। আমরা এরকম নির্দেশ দিতেও পারিনা। মে- জুন মাসের মধ্যে আনন্দ গ্রুপের বুলবুল হাউজ ( বাগান বাড়ি) সহ দখল করা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। হামিম গ্রুপের দখল করা নদীর জায়গার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমাদের প্রকৌশল বিভাগ বলতে পারবে।
তুরাগ নদীর টঙ্গীর পাগার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিএর দেয়া খুঁটির ( পিলার) মধ্যে ৪৮ নম্বর থেকে ৬০ নম্বর পর্যন্ত ১৩টি খুঁটি নেই। এই ফাঁকা জায়গায় গড়ে উঠা জাবের এন্ড জুবায়ের গ্রুপের ক্যামিকেল গোডাউনের কিছু অংশ ভাঙা। ৪৭ থেকে ৬১ নম্বর খুঁটির দূরত্ব সীমার ভেতরে থাকা ওই গোডাউন এখনো সচল।
এ বিষয়ে জাবের এন্ড জুবায়ের গ্রুপের এডমিন অফিসার কায়েস বলেন, আমরা কোন জবর দখল করি নাই। নদীর সীমানায় যে টুকু পড়েছিল সেটুকু ছেড়ে দিছি।
টঙ্গী নদী বন্দরের ইনচার্জ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম মিয়া এ বিষয়ে বলেন, মৌজার সীমানাজনিত কারণে হয়ত ১৩ টি খুৃটি নেই। প্রয়েজনে দেয়া হবে। জাবের এন্ড জুবায়ের গ্রুপের ক্যামিকেল গোডাউনের কিছু অংশ ভাঙা হয়েছে। বাকী অংশ নদীর জায়গা হলে ভেঙে ফেলা হবে।
এছাড়া শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর পানি দিন দিন কালো হয়ে যাচ্ছে। দখলে ও দুষনে মৃত প্রায় শীতলক্ষ্যা তুরাগ ও বালু নদী। শীতলক্ষ্যার তীরে শত শত দখলদার স্থাপনা করে বসে আছে। নদীর তীরে গড়ে উঠা ইটের ভাটার কালো ধোঁয়া ও কলকারখানার বর্জ্য পানিতে মিশে নদীর পানির রঙ কালো ও দুর্গন্ধময় করে ফেলেছে। দিন যতই যাচ্ছে নদীরগুলোর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠছে। একই সাথে নদী খেকোরা তাদের দখল কাজও চালিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থার অবসান করতে নদীগুলো বাঁচার আর্তনাদ করছে।