বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদসহ জাতীয় নেতাদের মুক্তি দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। গণমাধ্যমে পাঠানো দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি জানান। খালেদা জিয়া বলেন, দেশবাসী জানেনÑ সরকারের অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে যখন বিএনপি প্রতিবাদ করছে এবং জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি থেকে এক চুলও সরে আসছে না, তখন সরকার সারা দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসত্য, কাল্পনিক মামলা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করছে, নির্যাতনও চালাচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদকে মঙ্গলবার গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, সরকার যখন জাতীয় প্রেস ক্লাবের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের যজ্ঞে লিপ্ত-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আওয়াজকে স্তব্ধ করার জন্যই সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পরও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ৮৬ বছর বয়স্ক প্রবীণ নেতা এম কে আনোয়ার কুমিল্লার একটি স্থানীয় ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা আমাদের মর্মাহত করেছে। দেশের একজন সম্মানিত প্রবীণ নেতার প্রতি সরকারে এই আচরণ চরম অমানবিক, অসহিঞ্চুতার প্রমাণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়। ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া বলেন, ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারির একতরফা-ভোটবিহীন নির্বাচনে গঠিত সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে সংহত করতে গিয়ে দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইতিমধ্যে তছনছ করে ফেলেছে। তাদের দুঃশাসনের কবলে জাতি আজ নিষ্পৃষ্ট। কিন্তু বিচার বিভাগের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ন্যায় বিচার লাভের আশায় মিথ্যা, সাজানো মামলা কাঁধে নিয়ে জামিন পাওয়ার জন্য যখন বিচারকের কাছে তারা আত্মসমর্পণ করছেন, তখন জামিন না দিয়ে নেতা-কর্মীদের একের পর এক কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এভাবে দেশে আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও চাঁদপুর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিককেও কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা সরকারের এহেন অসহিঞ্চু মনোভাবের তীব্র নিন্দা করি। আমি সরকারকে দমন-নিপীড়নের পথ পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার আহবান জানাই। দমন-নিপীড়ন চালিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে বিনা ভোটে এ সরকার ক্ষমতায় থাকার যে দিবা-স্বপ্ন দেখছেন তাতে করে তারা ক্রমাগতভাবেই জনগণের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমি পুনরুল্লেখ করতে চাইÑ দেশে যে চরম রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে, সেখান থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি দ্রুত নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। সরকার আমাদের পুনঃপুনঃউত্থাপিত দাবির প্রতি কর্ণপাত না করায় জাতি ক্ষুব্ধ। জনগণের আকাক্সক্ষার কথা সরকার পড়তে ব্যর্থ হচ্ছে। বিএনপি’র প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণের নিন্দা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমি অবিলম্বে প্রবীণ নেতা এম কে আনোয়ার, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকসহ আটক সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি করছি। মিথ্যা সাজানো মামলায় কোন নেতাকর্মীকে হয়রানি না করারও জোর দাবি জানাচ্ছি। বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি কখনোই প্রতিশোধের পথ বেছে নেবে না। বরং জাতীয় ঐক্যের চেতনাকেই প্রাধান্য দেবে।