নেপালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের জয়ই ফাইনালের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ দলকে। পরে ভারতের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জয়ে নিশ্চিত হলো ১০ মার্চ এবারের সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলা। শুরুতে গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ভারত সমতায় ফেরে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে নেয়। তবে শেষ দিকে সাইফুল বারী টিটুর দল আবারো ঝলক দেখায়, আদায় করে নেয় আরো দুই গোল।
মঙ্গলবার নেপালের কাঠমান্ডুর ললিতপুরে চিয়াসাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা সোয়া ৩টায় শুরু হয় ম্যাচ।
এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ফাইনাল খেলা নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। ফলে ৮ মার্চ ভুটানের বিপক্ষে এখন নিয়মরক্ষার ম্যাচ। অন্য দিকে হেরে ফাইনালে খেলা নিয়ে টেনশনে ভারত। শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে খেলতে ৭ মার্চ নেপালের বিপক্ষে জিততে হবে তাদের। অন্য দিকে নেপালের সামনেও ফাইনালে খেলার সুযোগ। স্বাগতিকরা জিতলে তারাই যাবে ফাইনালে।
বয়স-ভিত্তিক ফুটবলে দূরপাল্লার শটে গোল নিয়মিত হয়ে গেছে। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম গোলটাও সেভাবে। ৯ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে পোস্টে ভলি নেন বাংলাদেশ ফরোয়ার্ড আলপি আক্তার। বল ভারতীয় গোলরক্ষক সুরাজমনি কুমারির হাতের ওপর দিয়ে জালে যায়। সাথে সাথে সাথে বাংলাদেশ শিবিরে উল্লাস। এই ১-০ গোলের লিড নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ টিটু বাহিনীর।
তবে বিরতির পরপরই খেলায় ফিরে ভারত। ৫৫ মিনিটে ডান দিক থেকে নেয়া ভারতীয় ফুটবলারের ক্রসে পরাস্ত বাংলাদেশ দলের শেষ প্রহরী ইয়ানজান বেগম। বল গোল পোস্টর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাতে পা লাগিয়ে গোল আনুস্কা কুমারীর। এর আগে ৫২ মিনিটে সেতার রানীর শট পোস্টে লাগে। গোলের পর ভারত উজ্জীবিত ফুটবল খেলতে থাকে। আর বাংলাদেশ তখন রক্ষণভাগ সামলিয়ে কাউন্টারে গোলের অপেক্ষায় ছিল। এই সময়ে ভারতে বেশ কয়েকবার গোলের খুব কাছে চলে যায়। অর্পিতার নেতৃত্বে ডিফেন্স লাইনে তখন ফাটল। বিশেষ করে লেফট ব্যাক পজিশনে। গোলরক্ষক ইয়ানজান বেগমের দৃঢ়তায় দ্বিতীয় গোল হয়নি। ৭০ মিনিটে আনুস্কার টোকো ধরে ফেলেন ইয়ানজান।
৮৮ মিনিটে এই বাংলাদেশ কিপারের গোলকিক দলের ফের লিড নেয়ার উৎস। তার গোল কিক মাঝ মাঠে আয়ত্বে নেন থুইনুয়ে মারমা। তিনি বল বাড়ান স্ট্রাইকার সৌরভী আকন্দ প্রীতির উদ্দেশে। প্রীতি বলের কাছে যাওয়ার আগে ভুল করে বসেন দুই ভারতীয় ডিফেন্ডার ইউজাবেথ লারকা এবং রুপশ্রী মুন্ডা। দু’জনের ভুল বুঝাবুঝির সুযোগে বল দখলে নেন প্রীতি। এরপর শিল্ডিংয়ে বিপক্ষ মার্কারকে ছিটকে বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে ডান পায়ের কোনাকুনি শটে পরাস্ত করেন ভারতীয় কিপারকে। ফলে আসরে তার গোল এখন তিনটি। নেপালের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছিলেন তিনি।
এই গোলের পর বাংলাদেশ আরো চড়াও হয়ে খেলতে থাকে, আর ভারত তখন কোনঠাসা। এই সুযোগে ৮৯ মিনিটে লাল-সবুজদের জয় নিশ্চিত করা গোল। ৮২ মিনিটে মাঠে নামা মৌমিতা খাতুনের কর্নারে পা লাগিয়ে গোল করেন অধিনায়ক অর্পিতা বিশ্বাস।
ম্যাচ শেষে কোচ টিটু জানান, ‘স্কোর ১-১ হওয়ার পর ভারত বেশ খেলছিল। তখন আমরা যেভাবে খেলে থাকি তখন সেই খেলা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। শুরু থেকে কখনো ধরে খেলা, তখনো ধরে ডাইরেক্ট ফুটবল সবই করছিল মেয়েরা। ভারত দ্বিতীয়ার্ধে লং পাসে খেলেছে। তবে সমতার পর আমাদের গোলরক্ষক ভালো দুটি সেভ করেছে।’
বাংলাদেশ কোচ যোগ করেন, ‘এই ম্যাচে আমরা আমাদের অবস্থান বুঝতে পারলাম। যা আমাদের ফাইনালে আরো সংগঠিত হয়ে খেলতে উৎসাহিত করবে।’
ভারতের কোচ বিবে থমাস মুত্তা বলেন, ‘আমরা আমাদের ভুলের শাস্তি পেয়েছি। যদিও আমরা ভালো খেলেছি। কিন্তু চান্স মিসই ভুগিয়েছে।’