বগুড়ায় শেষ হলো লেখক ও পাঠকের মিলনমেলা

রাজশাহী

মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি ঃ বই প্রেমী পাঠক ও লেখকের এক মিলনমেলার নাম বইমেলা। প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহ করার জন্য বছরব্যাপী পাঠকদের অপেক্ষার অবসান হয় এ মেলায়। বইপোকা, লেখক এবং প্রকাশকদের অনুভূতি গুলোর সংমিশ্রণে বইমেলায় সৃষ্টি হয় এক অনন্য নজির।বগুড়াও এর ব্যতিক্রম নয়। বগুড়া সম্মিলিতে সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও শহরের শহীদ খোকন পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। শুক্রবার (১ মার্চ) নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ১০ দিনব্যাপী বইমেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ সভাপতি আতিকুর রহমান মিঠু।এর আগে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সোয়া ৫ টার দিকে শহীদ খোকন পার্কে এ মেলার উদ্বোধন হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার আয়োজনে মেলা উদ্বোধনের পর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়নার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু।দশ দিনব্যাপী বইমেলা শুরুর পর থেকেই শহরের শহীদ খোকন পার্কে বইপ্রেমী মানুষদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, মেলায় ভিড় বাড়তে থাকে পাঠকদের। কেউ পরিবারের সাথে আবার কেউবা বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে আসেন প্রাণের বই মেলায়। মেলায় থাকা প্রায় ৪০ টি স্টল ঘুরে-ঘুরে পছন্দের বই দেখতে থাকেন এসব বইপ্রেমী পাঠকরা। বিক্রেতার সাথে দরদাম করে সংগ্রহ করেন পছন্দের বইটি। এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট থেকে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক পবিত্র মহান্ত, সাংবাদিক শিক্ষক বীরেন মাহাতু, সমাজ সেবী দীপক কুমার ঘোষ, মুক্তাক্ষর সাহিত্য স্রোতের সভাপতি কবি অশোক দাশ, সাধারণ সম্পাদক কবি দেবাশীষ অধিকারী। শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন তারা। এরপর একুশের অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার পক্ষ থেকে তাদের শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়। তারাও সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু, জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না ও সাধারণ সম্পাদক সাঈদ সিদ্দিকীকে সম্মামনা স্মারক প্রদান করেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের হাতে উপহার তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো সাইফুল ইসলাম।মেলার চতুর্থ দিন শুক্রবার বিকালে দেখা যায় পাঠকদের উপচে পড়া ভিড়। বিক্রেতারা জানায় শিশু-কিশোরদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে নতুন লেখকদের পাশাপাশি হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবালের বই সংগ্রহে এবারও পাঠকদের বেশ চাহিদা রয়েছে।তবে হুমায়ুন আহমেদের ‘অপেক্ষা’ ও ইলমা বেহরোজের ‘পদ্মজা’ উপন্যাসটি চাহিদা অনুযায়ী না পেয়ে পাঠকদের মধ্যে দেখা যায় বিষণ্ণতা। এদিকে বিক্রেতারা জানিয়েছে এই দুই বইয়ের চাহিদা এত বেশি যে এর মধ্যেই সব কপি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তবে আগামীকাল থেকে পাঠকরা এই দুটি জনপ্রিয় উপন্যাস চাহিদা অনুযায়ী পাবেন বলে পাঠকদের আশ্বস্ত করেন বই বিক্রেতারা। এদিকে পছন্দের বই না পেয়ে বিষণ্ণ পাঠকরা। কথা হলো অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া রাকেশ সরকারের সাথে। তিনি হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা বই কিনতে এসেছিলেন। তবে পছন্দের লেখকের বই না পেয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক উৎসাহ নিয়ে ‘অপেক্ষা’ বইটি কিনতে এসেছিলাম বগুড়া বই মেলায়। কিন্তু বইটি কোনো স্টলেই পাইনি। তাই একটু মন খারাপ।’ইলমা বেহরোজের ‘পদ্মজা’ উপন্যাসটিও এবার বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। পছন্দের এই বইটি না পেয়ে মুহতাসিব নামের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক পাঠক বলেন, ‘পদ্মজা বইয়ের রিভিও দেখে অনেক ভালো লেগেছে। তাই বইটি কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।’বই বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায় অপেক্ষা ও পদ্মজা এই দু’টি বই এবার বইমেলায় পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। নিউজ কর্ণার পাবলিকেশনের প্রকাশক কালীপ্রসন্ন টিপু বলেন, ‘আগামিকাল থেকে অপেক্ষা ও পদ্মজা বইটি চাহিদা অনুযায়ী আমরা পাঠকদের দিতে পারবো।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবার মেলায় আসা লেখকদের নতুন বইয়ের পাশাপাশি হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ অনেক বেশি। এছাড়াও জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশনসহ ‘কখনো আমার মাকে’ বইটি বেশি বিক্রি হচ্ছে।’অন্যান্য দিনের চেয়ে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বইমেলায় পাঠকদের সমাগম বেশি দেখা যায়। এদিকে হঠাত চোখে পড়ে লেখক তার অটোগ্রাফ দিয়ে পাঠকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বই। বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের বাংলার শিক্ষক এস এম আওয়ালের লিখা ‘আলোকে স্নাপিত’ কাবগ্রন্থ বইটি স্টল থেকে সংগ্রহ করছেন পাঠকরা। এরপর বইয়ে লেখকের অটোগ্রাফ নিচ্ছেন তারা। এ যেন লেখক-পাঠকের মিলনমেলা।বই বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার বইমেলায় শিশু-কিশোরদের বই বেশি বিক্রি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *