টঙ্গীতে শতকোটি টাকা মূল্যের পুকুর ভরাট কাজ বন্ধ

Slider টপ নিউজ
Exif_JPEG_420

টঙ্গী : গাজীপুরের টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ১.৭৭ একর আয়তনের প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের পুকুর ভরাট কাজ যথাযথ কাগজপত্র না থাকার অভিযোগে বন্ধ করে দিয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন।

আজ সোমবার টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় নিজ কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট ৫৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসেম এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

আবুল হাসেম বলেন, ভরাটকারীরা আমাকে যে কাগজ দিয়েছেন তা সন্দেহজনক। তাদের কাছে ওয়ার্ক অর্ডারসহ জমির সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে না পারায় ভরাট কাজ বন্ধ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, কাজ বন্ধ করার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দিয়ে জনৈক জসিম উদ্দিন টঙ্গী পশ্চিম থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দ্বীন মোহাম্মদ নীরবের বাসায় লোক পাঠায় অতপর নীরবকে মাটি ভরাটের বাকী কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন। এসব কারণে আমার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হওয়ায় আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়ে পুকুর ভরাট কাজ বন্ধ করেছি। তারা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে জায়গাটি সিটি কর্পোরেশনের কাজে ব্যবহৃত হবে বলে জানান কাউন্সিলর আবুল হাসেম।

কাউন্সিলর অফিস থেকে পাওয়া ভরাটকারীদের একটি ছোট কাগজে দেখা যায়, কাগজটিতে দুই পক্ষের স্বাক্ষরে কোন অফিসিয়াল পদবী নেই, নেই কোন ঠিকানা। নোটিফিকেশন অব এ্যাওয়ার্ড লিখা শ্লিপ আকৃতির ওই কাগজ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আজ সোমবার বেলা আড়াইটায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুকুর ভরাট কাজ বন্ধ রয়েছে। ওখানে দায়িত্বশীল কোন লোক নেই। গেটে তালা ঝুলছে।

গত সপ্তাহে টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় শতকোটি টাকা মূল্যের পুকুর ভরাট কাজ শুরু হয়। রাতে ভরাট হয়, দিনে বন্ধ থাকে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সন্দেহ সৃষ্টি হলে চারিদিকে অনুসন্ধান শুরু হয়। সরকারী কর্তৃপক্ষ বলছে, কাগজে পুকুর লেখা নেই। মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাষ্টের পক্ষ থেকে কেউ ভরাট করে থাকতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট করে পুকুরের মালিকানা সম্পর্কে কোন বক্তব্য দিতে পারেনি টঙ্গী ভূমি অফিস।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নয়ন ভুইয়া বলেন, টঙ্গীর সহকারী কমিশনারকে বলুন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

টঙ্গী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তামান্না রহমান জ্যোতি গনমাধ্যমকে বলেন, কাগজপত্রে পুকুর নেই। মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাষ্টের কেউ ভরাট কাজ করতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাইসন্স অনেক আগেই জায়গা ফেলে চলে গেছে। তারপর কিছু দিন মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাষ্টের একটি সাইনবোর্ড ছিল। এখন এটিও নেই।

টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় গেলে গেটের সামনে দায়িত্বরত কেয়াটেকার হান্নান মিয়া বলেন, এটা ভরাট করছে মুক্তিযুদ্ধ কল্যান ট্রাষ্ট। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী মোজাম্মল হক, এখন কে জানা নেই। তবে একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে জনৈক বাবুল সাহেবের সাথে কথা বলতে বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে বাবুলকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাষ্টের একজন কর্মচারী। আমরা এখানে ওয়্যারহাউস করব। তার পুরো নাম ও সম্পুর্ন পদবী জানতে চাইলে তিনি পরে জানাবেন বলে লাইন কেটে দেন।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মল হক এমপি বলেন, এরকম কোন খবর জানিনা। কেউ আমার কথা বললে তাকে পুলিশে দিন। তিনি বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেলকে জানানোর জন্য বলেন।

এবিষয়ে স্থানীয় সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেলকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাষ্টের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল ইসলাম গনমাধ্যমকে জানান, টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় ট্রাষ্টের আয়বর্ধনের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। একজন ঠিকাদাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত: গত সপ্তাহ থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় শতকোটি টাকা মূল্যের ছয় বিঘা আয়তনের একটি পুকুর ভরাট কাজ শুরু হয়। রাতে ভরাট কাজ হয় ও দিনে বন্ধ থাকে। এটা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে কৌতুহল সৃষ্টি হলে অনুসন্ধান করে ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে টঙ্গীতে মুক্তিযু্দ্ধ মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে শতকোটি টাকা মূল্যের পুকুর ভরাট শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য উপস্থাপন কর হয়। এই সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *