কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে মুরগির দাম

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

রোজার আগে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এসব পণ্যের শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও বাজারে এই চার পণ্যের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। একই সাথে ব্রয়লারসহ সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ছোলা, ভোজ্য তেল, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর এই আট পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রমজানে ভোগ্য পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমদানি সহজ করতে সম্প্রতি একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ। তার পরে খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ছোলার দাম গত এক বছরের ব্যবধানে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে খুচরায় কেজি মানভেদে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ কেজিতে ২০০ থেকে ২১৪ শতাংশ দাম বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে ১৩০ টাকা কেজিতেও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ১১ থেকে ১২ শতাংশ দাম বেড়ে ছোট দানার দেশী মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়েনি, ১০ শতাংশ দাম কমে প্রতি লিটার ১৭৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বছরব্যাপী অস্থির ছিল চিনির বাজার। মাঝে বাড়তি দাম দিয়েও ক্রেতারা চিনি কিনতে পারেননি। এক বছরের ব্যবধানে খোলা চিনি কেজিতে ১৭ থেকে ২২ শতাংশ দাম বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উচ্চ শুল্কায়নের কারণে বাজারে খেজুরের দাম অনেকটাই বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণমানের খেজুর প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ দাম বেড়ে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুটা ভালোমানের খেজুর আজোয়া ও মরিয়ম মানভেদে কেজি ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন সুপার শপে উন্নতমানের খেজুর চার হাজার টাকা পর্যন্তও বিক্রি করতে দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, খেজুর আমদানিতে শুল্ক ব্যাপক হারে বৃদ্ধি, ডলারের সাথে টাকার অবমূল্যায়ন ও এলসি খোলায় জটিলতার কারণে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। ফলে এবার দেশের বাজারে খেজুরের দাম বাড়তি। বাড়তি শুল্ক দিয়েও ব্যবসায়ীরা এবার খেজুর আমদানি করতে পারেননি। যার কারণে চাহিদার তুলনায় বাজারে খেজুরের সরবরাহ কম। দেশের বাজারে খেজুরের সরবরাহ বাড়াতে শুল্ক আরো কমিয়ে ব্যবসায়ীদের খেজুর আমদানির সুযোগ দিতে হবে। তাহলে অনেকটাই কম দামে ভোক্তারা খেজুর কিনতে পারবেন।
বাজারগুলোতে শীতকালীন সব ধরনের সবজির দাম কিছুটা কমেছে। নতুন আলু গত সপ্তাহের মতো ৩৫ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মুলা ৪০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পাকা টমেটোর কেজি প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা ও গাজর ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার এসব বাজারে বেগুনের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকায়, খিরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, লেবুর হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতিটি ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁয়াজের কলি ৫০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

লালশাক ১৫ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এসব বাজারে দেশী পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা কমে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে দেশী পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। পুরনো দেশী পেঁয়াজ ১৩০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি, যা গত সপ্তাহে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।

এসব বাজারে সোনালি, সোনালি হাইব্রিড মুরগির দামও বেড়েছে। বাজারগুলোতে সোনালি ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৮০ টাকা, দেশী মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরুর গোশত কেজিপ্রতি ৬২০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির গোশত কেজিপ্রতি ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। হাঁসের ডিমের হালি ২০০ টাকা, দেশী মুরগির ডিম ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ৯০০ টাকা, চাষের শিংয়ের কেজি (আকার ভেদে) ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকার ভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, মাগুর ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৬০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকায়, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, দেশী কই ১ হাজার টাকা, মেনি ৭০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, বেলে ৭০০ টাকা এবং কাইকলা বা কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *