রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ফুটপাত ও রাস্তার দখল করে গড়ে উঠা ফুলের দোকানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দোকানিদের হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তিনজন সাংবাদিক।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শাহবাগের পাইকারি ফুলের দোকান মালিক সমিতির নেতা শেখ মো. মেরিনের মালিকানাধীন ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার তিন সাংবাদিক হলেন- নিউজ বাংলা ২৪ ডটকমের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মনিরুল ইসলাম, রেডিও টুডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মো. ইমদাদুল আজাদ ও বিডি নিউজ ২৪ ডটকমের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক রাসেল সরকার।
এদের মধ্যে ইমদাদুল আজাদের ডান চোখের দুই পাশ মারাত্মকভাবে জখম হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
ঘটনার খবর শুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে হামলাকারীদের হামলার কারণ জিজ্ঞেস করতে গেলে ওখানে অবস্থানরত কিছু পুলিশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসহযোগিতা এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এক পর্যায়ে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন এবং দোকানিদের হামলা ও ফুটপাত দখল করার বিষয়টিকে বৈধতা দেন।
এরপর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসে হামলায় অভিযুক্তকে ধরে থানায় নিয়ে গেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
উক্ত ঘটনার ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলার আবেদন করেছেন। এতে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন- পায়েল (৩৫), সাল্লু (২৭), আব্দুর রাজ্জাক (৩৫), বুলু (৩২), দিদার (৩১), বাবু (৩০), জাহাঙ্গীর (৩২)। তারা সবাই শাহবাগ ফুল মার্কেটের কর্মচারী।
ঘটনার বর্ণনায় মামলার এজাহারে মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি পেশাগত কাজে আমার কলিগ বিডি নিউজ বাংলা-২৪ এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. রাসেল সরকারকে সাথে নিয়ে শাহবাগ মোড়ের ফুল মার্কেট এর ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপে ফুলের দাম বেড়ে যাবার কারণ সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহে যাই। ওই দোকানে কর্মরত পায়েল নামে একজনের সাথে কথা বলতে চাইলে সে আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে। এরপর আমাদেরকে ভুয়া সাংবাদিক বলে আখ্যায়িত করে। আমরা মৌখিকভাবে এর প্রতিবাদ করলে সে উত্তেজিত হয়ে আমাকে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করে। আমার কলিগ (রাসেল) তার প্রতিবাদ করতে গেলে পায়েল, সাল্লু, আ. রাজ্জাক, বুলু, দিদার, বাবু এবং জাহাঙ্গীরসহ আশেপাশের দোকানের কর্মচারীরা এসে আমাদের দুজনকে মারপিট করে।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমার অন্য কলিগ মো. ইমদাদুল আজাদ সাংবাদিক পরিচয়ে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকেও মারপিট করে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। আমরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় বিবাদীরা পিছন দিক থেকে আমাদের ওপর আবার হামলা করে। এসময় ইমদাদকে রাস্তায় ফেলে এলোপাথাড়ি মারপিট করে, তার ডান চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী আমাদেরকে চিনতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে এবং আহত ইমদাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। ইমদাদুল আজাদের চোখে রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মনিরুল ইসলাম।
মারধরের শিকার হওয়া রেডিও টুডের ঢাবি প্রতিবেদক ইমদাদুল আজাদ বলেন, নিউজবাংলার ঢাবি প্রতিনিধি মনিরুল ভাইকে মারধর করা হয়েছে শুনে আমি ঘটনাস্থলে যাই। বিডিনিউজের রাসেল ভাই সেখানেই ছিলেন। সারাবাংলা ডটনেটের ঢাবি প্রতিনিধি রাহাতুল ইসলাম রাফি ভাইও আমার মতো খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন। ঘটনা সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করছিলাম। এসময় মনিরুল ভাইকে মারধরকারীসহ আরও কয়েকজন এসে আমাদের ওপর হামলা করেন। আমাকে তারা এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি-লাথি মারতে থাকেন। তাদের একজনের ঘুষিতে আমার চশমা ভেঙে যায়। তাদের মারধরে আমার চোখের দুই পাশে কেটে গেছে। পরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ ফুলতলা ফ্লাওয়ার সপের মালিক মো. মেরিন শেখ বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমি ঢাকা বাইরে আছি। শুনেছি দোকানে ঝামেলা হয়েছে। আমাদের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাংবাদিকদেরকে শাহবাগ মোড়ের ফুল মার্কেটে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। মামলা হলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।