পাকিস্তানের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনে ৯২টি আসনে জয় পেয়েছেন
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান গহর আলী খান বলেছেন, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। শনিবার ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এসময় নির্বাচনে পিটিআই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বলে দাবি করেন গহর খান।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ১৭০টি আসনে জয় পেয়ে দলটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে দাবি করেছেন গহর খান। তিনি বলেছেন, ‘‘পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা ইমরান খান ঠিক করবেন। কারাগারে কিংবা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন তিনিই পিটিআইয়ের নেতা।’’
নির্বাচনে দেশটির জাতীয় পরিষদের ২৬৫ আসনের মধ্যে ১৭০টিতে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন গহর খান। তিনি বলেছেন, তাদের মধ্যে ৯৪ জনের জয়ের ঘোষণা পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) দিয়েছে। আর এই বিষয়ে তাদের কাছে নির্বাচন কমিশনের জারি করা ফর্ম-৪৫ রয়েছে।
পিটিআইয়ের এই নেতা বলেছেন, এ ছাড়া আরও ২২টি আসনে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। কিন্তু এসব আসনে ফল পাল্টে তাদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
সরকার গঠনে পিটিআইকে আমন্ত্রণ জানাবেন প্রেসিডেন্ট, দাবি গহর খানের
পিটিআই নাকি অন্য দল, পাকিস্তানে সরকার গঠন করবে কারা?
পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি। দেশটির নির্বাচন কমিশন ২৬৫টি আসনের মধ্যে ২৫৩টির ফল প্রকাশ করেছে।
এতে দেখা গেছে, জাতীয় পরিষদের ২৬৫টি আসনের মধ্যে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯২টি আসনে জয় পেয়েছেন। আর নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭১টি, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থীরা ৫৪টি, জামিয়তে উলেমা-ই-ইসলাম (জেইউআই-এফ) ৩টি ও অন্যান্যরা ৩৩টি আসনে জয় পেয়েছেন।
গহর আলী খান দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী তাদের সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানাবেন। যেহেতু জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন— তাই সংবিধান অনুযায়ী তাদের সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, কারও সঙ্গে আমাদের ঝগড়া নেই। আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করব এবং সরকার গঠন করব। সাধারণ মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। প্রিজাইডিং অফিসাররা ভোট গণনা করেছেন এবং সেই অনুযায়ী ফরম ৪৫ তৈরি করেছেন।
পাকিস্তানের বহুল আলোচিত এবারের নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন তাদের জোট গঠন করতে হবে। অর্থাৎ পাকিস্তানে জোট সরকার ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। তবে কোন দলের নেতৃত্ব জোট গঠিত হবে— এবং নির্বাচনে সর্বোচ্চ আসন পাওয়া পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে জোট গঠন করা হবে কি না সেটি এখন দেখার বিষয়।
দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাইঘাম খান কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেছেন, যে চিত্রটি দেখা যেতে পারে সেটি হলো একটি জোট সরকার। যেই জোটে পিটিআই ছাড়া বাকি রাজনৈতিক দলগুলো থাকবে। এতে থাকবে দেশটির দুই বড় দল পিপিপি এবং পিমএএলএন। সঙ্গে থাকবে এমকিউএম, জামাত-ই-ইসলামী ও অন্যান্যরা।