গোলাগুলি চলছেই, আতঙ্কে বাড়িঘর ছাড়ছেন সীমান্তের বাসিন্দারা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে প্রবীর চন্দ্র ধর (৫৯) নামের এক বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে ভোরে তুমব্রু কোনার পাড়ায় বসতঘরে পড়ে মর্টারশেল।

এই ঘটনার পর থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতে আজ সকালে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪ সদস্য তুমব্রু বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের ভেতরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘাত চলছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক। এসব গোলাবারুদ আর বিস্ফোরকের বিকট শব্দে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোর থেকে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে বাংলাদেশের একজন আহত হয়েছে। এর আগে ভোরে মর্টারশেল এসে বসতঘরে পড়ে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে দেশটির জান্তা বাহিনীর ১৪ সদস্য আশ্রয় নিয়েছে তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে। সবকিছু মিলিয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছেন। আমরা সবাইকে বলেছি কোনো কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে।

এই অবস্থায় স্থানীয়দের সরানো হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। আমি কিছু বলতে পারব না।

এদিকে সীমান্তে এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।

তুমব্রুর উত্তরপাড়া স্থানীয় বাসিন্দা খায়রুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেভাবে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি এপাড়ে এসে পড়ছে তাতে পরিবার ও নিজেকে নিরাপদ মনে করছি না। আপাতত উখিয়ায় বোনের বাসায় আশ্রয় নিচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরব।

ঢাকা পোস্টকে খালেক নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, গতকাল সিএনজি চালিত অটোরিকশায় এসে পড়ছে। আজ এক কৃষকের শরীরে। ভোরে বসতঘরে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ নিরাপদ নয়। তাই অন্য জায়গায় যাচ্ছি। সীমান্তের পরিস্থিতি এখনো থমথমে। আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছি।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ওয়ার্ডের কিছু মানুষ পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছেন। ভোর থেকে ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শুনা যাচ্ছে।

ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানকার পরিস্থিতি এই মুহূর্তে কিছুটা স্বাভাবিক আছে। সীমান্ত এলাকায় কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বিজিবি ও আমরা তৎপর আছি। আতঙ্কিত হয়ে এলাকা ছাড়ার খবর তেমন নেই।

এদিকে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে সীমান্তের ১০০ গজ দূরত্বে থাকা মিশকাতুন নবী দাখিল মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানান বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী।

আর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ সকাল থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকার অভ্যন্তরে গোলাগুলি বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত এলাকার বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ গুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *