গ্রাম বাংলা ডেস্ক: শেষ হাসি হাসবেন কে? মেসি না লাম। রয়টাসফাইনালের মহারণ আজ। আর্জেন্টিনা কি পারবে রিও ডি জেনিরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ২৮ বছরের হাহাকার ঘোচাতে? জার্মানিও যে ২৪ বছর ধরে বুভুক্ষু। ১৯৯০ সালের পর প্রত্যাশার শিরোপার অনেক কাছে এসেও ফিরে যাওয়া দলটি আজ যেভাবেই হোক চাইবে ২৪ বছরের আক্ষেপ মুছে ফেলতে। লিওনেল মেসির জন্য আজ রাতটি নিজেকে গ্রেটদের কাতারে নিয়ে যাওয়ার। ফিলিপ লাম, ম্যানুয়েল নয়্যার, বাস্তেইন শোয়েনস্টাইগাররাও চাইবেন নিজেদের লোথার ম্যাথাউস, ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান কিংবা রুডি ফোলারদের মতো ‘বিশ্বজয়ী জার্মান’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। ফুটবলপ্রেমীরাও উন্মুখ এক মাস ধরে চলা এই ‘মেগা সিরিয়ালে’র পরিণতি দেখার অপেক্ষায়। প্রিয় পাঠক, আসুন, এই রূদ্ধশ্বাস অপেক্ষার মাঝে একটি বার চোখ বুলিয়ে নিই যুদ্ধজয়ের কয়েকটি অনুষঙ্গে…
বন্দী করো মেসিকে
হল্যান্ডের বিপক্ষে মেসি ছিলেন একেবারেই বন্দী, একটি ফ্রি-কিক আর টাইব্রেকারে একটি পেনাল্টি দিয়ে ভাগ্যপরীক্ষা ছাড়া পুরো ম্যাচে তাঁকে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেসিকে ‘বন্দী’ করার ছক ডাচ কোচ লুই ফন গাল সাজিয়েছিলেন তাঁর দুই ডিফেন্ডর ব্রুনো মার্টিন ইন্ডি ও নাইজেল ডি জংকে দিয়ে। মেসিকে খোলসবন্দী করে রাখার মিশনে দারুণভাবেই সফল ইন্ডি ও জং। আজ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনালের আগে ফন গালকে জার্মান কোচ জোয়াকিম লো ফোন করেছিলেন নাকি তা জানা নেই, তবে ফন গালের এই কৌশল লোর মনে না ধরার কিন্তু কোনো কারণ নেই। আজকের ফাইনালে তিনি স্যামি খেদিরা কিংবা অধিনায়ক ফিলিপ লামকে দায়িত্ব দিতে পারেন মেসিকে বন্দী করার। ভুলে গেলে চলবে না ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের দুই লেগে বার্সেলোনাকে ৭-০ গোলে পেছনে ফেলা বায়ার্ন মিউনিখের অনেক খেলোয়াড়ই যে আছেন আজকের জার্মান দলে।
ক্ষুরধার জার্মান মধ্যমাঠ
এবারের বিশ্বকাপের শুরুতে জোয়াকিম লো মধ্যমাঠের দায়িত্ব স্যামি খেদিরা-বাস্তেইন শোয়েনস্টাইগার আর টনি ক্রুসকে দেননি। খেদিরার জায়গায় অধিনায়ক ফিলিপ লাম দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। খেদিরা খেলছিলেন একটু নিচে নেমে। কিন্তু ঘানা, যুক্তরাষ্ট্র ও আলজেরিয়ার বিপক্ষে রক্ষণের নড়বড়ে অবস্থা ফুটে উঠলে লো কৌশল পরিবর্তন করে লামকে নিচে নামিয়েছেন। লাম নিচে নামায় এখন আক্রমণের ধারাটা হচ্ছে অনেক বেশি শাণিত। এর প্রমাণ খুব সম্ভবত ব্রাজিল পেয়ে গেছে সেমিফাইনালে ৭-১ গোলে ভূপতিত হয়ে।
সাবেলার রণকৌশল
একটি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত আর্জেন্টাইন দল নিয়েই এবার বিশ্বকাপে এসেছেন কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলা। যে আর্জেন্টিনার রক্ষণ নিয়ে আগে বহু সমালোচনা ছিল, যে আর্জেন্টিনার রক্ষণকে অনেক সময় ‘তাসের ঘরের’ সঙ্গে তুলনা করা হতো, সেই আর্জেন্টিনার রক্ষণই এবার অনেকটাই আঁটসাঁট। একটা বারের জন্যও এই রক্ষণে চিড় ধরার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি গোটা বিশ্বকাপেই। জার্মান-যন্ত্রদের ঠেকাতে আজ সাবেলা কী কৌশল নেবেন, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে হল্যান্ডের বিপক্ষে সাবেলার রণকৌশল যেভাবে রোবেন-স্নাইডারদের বোতলবন্দী করে ফেলেছিল, সেটা আজ মারাকানায় দেখা গেলে কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু নেই। কৌশলগত প্রতিরোধের মুখে একটু দিশেহারা হয়ে যাওয়ার নজির জার্মানি কিন্তু দেখিয়েছে এই বিশ্বকাপেই।
অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার ফেরা
এই বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির পাশাপাশি অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া কিন্তু নিজেকে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন-সারথি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। অনেক সময় প্রতিপক্ষের মনোযোগের পুরোটা মেসি নিয়ে নিলে বাজিমাতটা করছেন এই ডি মারিয়াই। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ডি মারিয়া আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়ায় সেমিফাইনালে বেশ বিপদেই পড়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু কৌশলগতভাবে রণকৌশলে পরিবর্তন এনে সে যাত্রা রক্ষা পেয়েছে আর্জেন্টিনা। আজ ফাইনালে তাঁর মাঠে নামার কিন্তু যথেষ্ট সম্ভাবনাই আছে। আর তিনি যদি মাঠে নেমেই পড়েন, তাহলে জার্মানরা তাঁর সামনে কিছুটা খেই হারাবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই। আলজেরিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচটিতে কিন্তু প্রমাণ হয়ে গেছে দ্রুতগতির আক্রমণের সামনে জার্মান রক্ষণ একটু অসহায়ই। আর এটা তো সত্যি, ডি মারিয়া দ্রুতগতির আক্রমণের জন্য সমাদৃত।
জার্মানরা যদি এগিয়ে যায়…
খুব দ্রুতই জার্মানরা যদি ম্যাচে গোল করে এগিয়ে যায়, তাহলে আর্জেন্টিনার ফেরা খুব মুশকিল হয়ে পড়তে পারে। পরিসংখ্যানই বলছে, এই বিশ্বকাপে জার্মানরা যদি প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে গোল পেয়ে যায়, তাহলে তাদের পরাস্ত করা খুবই মুশকিল। পর্তুগাল, ফ্রান্স আর ব্রাজিল এ ব্যাপারে আর্জেন্টিনাকে পরামর্শ দিতে পারে।
সেমিফাইনাল যেখানে সুবিধা…
ব্রাজিলের বিপক্ষে জার্মানির প্রথম সেমিফাইনালটি যে এমন একপেশে হবে, সেটা কি কেউ ভাবতে পেরেছিল? ওই ম্যাচের দুই-তৃতীয়াংশ হাতে রেখেই জার্মানি ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলায় পরের সময়টুকু একেবারেই চাপমুক্ত হয়ে খেলেছে তারা। তাদের খেলার ধরন ছিল অনেকটাই হালকা চালে, অনুশীলনের মুডে। আর্জেন্টিনা হল্যান্ডের বিপক্ষে এ ধরনের বিলাসিতা দেখানোর কোনো সুযোগই পায়নি। বরং তাদের দাঁতে দাঁত চেপে লড়তে হয়েছে ১২০ মিনিট। তারপর নিতে হয়েছে টাইব্রেকারের অসহনীয় স্নায়ুচাপ। এ ব্যাপারটি ফাইনালে প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলেও মত দিয়েছেন অনেক বিশ্লেষক।