টঙ্গী( গাজীপুর) প্রতিনিধি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে । দেশীয় অস্ত্রের মহড়া, অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের প্রেক্ষিতে পলিশি টহল জোরদার হয়েছে । সর্বশেষ টঙ্গীর দুই থানায় পৃথক তিনটি অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। এসব ঘটনায় একজন আহত ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার(২৭ জানুয়ারী) বিকেলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এর আগে শুক্রবার ( ২৬ জানুয়ারী) রাতে টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকায় গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এর আগে শিলমুন এলাকায় পৃথক ঘটনায় জুমার নামাজের পর মসজিদের সামনে হামলা করে নৌকার একজন কর্মীকে আহত করে বিএনপির কর্মীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার টঙ্গীর শিলমুন এলাকায় জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর নৌকা প্রতীকের কর্মী মোটর শ্রমিকলীগ নেতা সোলায়মান মৃধা (৫৭) প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। তিনি এই হামলার জন্য বিএনপির দুই কর্মীর নামে টঙ্গী পূর্ব থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
সোলায়মান মৃধা বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে আসামীরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করেন। আমি প্রতিবাদ করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মেরে রক্তাক্ত জখম করেছে। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
এদিকে শুক্রবার রাতে টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকায় নৌকার কয়েকজন কর্মী ঈগল প্রতীকের কর্মী আলামিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিমাচল পরিবহনের একটি বাস ভাংচুর করে। পুলিশ চেষ্টা করে নিভৃত করতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন উত্তর সহিংসতার ঘটনায় টঙ্গীর দুই থানায় পৃথক তিনটি অভিযোগ হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, কয়েক দিন ধরে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা ঈগল প্রতীকের কর্মী জনৈক আলামিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিমাচল পরিবহনের কাউন্টারে মহড়া দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বার বার মহড়া দিতে আসলে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও আবার উত্তেজনা দেখা দেয়। এই অবস্থা চলমান রয়েছে।
জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ ( সদর টঙ্গী) আসনে মোট আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে তিনজন প্রার্থী আওয়ামীলীগের। নৌকা ট্রাক ও ঈগল প্রতীকের এমপি প্রার্থীর মধ্যে নৌকা প্রতীক বিজয়ী হয়। এই সংসদীয় আসনের টঙ্গী এলাকায় নৌকা ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর বাড়ি। দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য করে আসছিল। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বিজয়ী হওয়ায় নৌকা ও ঈগল সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। শিল্পনগরী টঙ্গীর প্রায় অর্ধ সহস্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলামের কর্মী সমর্থকরা গুটি কয়েক শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা বানিজ্য করত। নির্বাচনের পর নৌকার সমর্থকরা ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। নির্বাচনের পর থেকে থেমে থেমে চলে এই চাপা উত্তেজনা। এখন এই মাত্রা সহিংসতায় রুপ নেয়ার আশংকায় এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। বিচ্ছিন্নভাবে হালকা ঘটনাও ঘটে। ১০ জানুয়ারী ও ২৩ জানুয়ারী রাত আটটার দিকে টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকায় হিমাচল পরিবহন কাউন্টারে ব্যবসা দখলের জন্য অনুষ্ঠিত হয় দেশীয় অস্ত্রের মহড়া।
হিমাচল পরিবহনের ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, তিনি যুবলীগ করেন। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি এই ব্যবসা করে আসছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তার দলের নেতা সাইফুল ইসলামের ঈগল প্রতীকের নির্বাচনে এজেন্ট ছিলেন। এই জন্য তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের জন্য দফায় দফায় মহড়া আসছে। দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে কতিপয় লোক তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা করছেন। সর্বশেষ শুক্রবার তার গাড়ি ভাংচুর কর হয়েছে। একই অবস্থা টঙ্গীর বেশ কিছু জায়গায় বলে জানান তিনি। এসকল বিষয়ে তিনি টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে আলামিনের বিবাদী পক্ষ আলামিনের বিরুদ্ধেও রাস্তায় এলোমেলোভাবে গাড়ি রাখার অভিযোগ এনে একটি দরখাস্ত করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, টঙ্গীতে একাধিক সিটি কাউন্সিল তার লোকজন দিয়ে নৌকা বিরোধীদের ব্যবসা দখলের মিশনে নেমেছেন। তাদের সাথে স্থানীয় একাধিক শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতা রয়েছেন। টঙ্গীকে কয়েক অংশে ভাগ করে তারা মিশন পরিচালনা করছেন। যারা নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করেছেন তাদের দখল থেকে সকল ব্যবসা বানিজ্য ছিনিয়ে নিতে এই মিশন বলে জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী।
এ বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আলামিন ঈগল প্রতীকের পক্ষে ছিল। তাই একটু সমস্যা হচ্ছে। আমি বিষয়টি দেখছি, কোন সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।