বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে বিএসএফ কতৃর্ক নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জাতিসঙ্ঘে তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই দাবি জানানো হয় বলে শনিবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘গত ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ভোরে যশোর সীমান্তের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট-সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে। ভারত কতৃর্ক বার বার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিকদেরকে হত্যার ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়তই প্রাণহানীর সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে গণমাধ্যমে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে সাত বছরে ২০১ জন বাংলাদেশী নাগরিক বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, ‘সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে গুলি করে হত্যার পর বিএসএফের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘তিনি (নিহত ব্যক্তি) বিজিবির সদস্য তা তারা বুঝতেই পারেনি, তিনি লুঙ্গী ও টিশার্ট পরে ছিলেন এবং পাচারকারী দলের সঙ্গে তাকে ভারতের সীমানার ভিতরে দেখা গিয়েছিল। একজন বিজিবি সদস্য কিভাবে লুঙ্গী আর টিশার্ট পরে পাচারকারী দলের সঙ্গে মিশে থাকতে পারেন সেটি তাদের বোধগম্য নয়। এই বয়ান শুধু বানোয়াটই নয়, ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের ‘বিগ ব্রাদার’ সুলভ গরীমা থেকে উৎসাহিত হয়ে বিএসএফ তাদের হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাইছে। একজন বিজিবি সদস্য কখনোই লুঙ্গী ও টিশার্ট পরে পাচারকারী দলের সঙ্গে থাকতে পারেন না।’
বিবৃতিতে বলা হয়, “বিএসএফের মন্তব্যের সঙ্গে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’ও দ্বিমত পোষণ করেছে। বিএসএফের এহেন আচরণের ইতিহাস যুগপৎ হিংসাশ্রয়ী ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। বরাবরই বিএসএফের কৃত অপরাধকর্ম এবং বয়ানের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান থাকে। তাদের আচরণে মনে হয় তারা আদিম যুগ পেরোতে পারেনি। মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে হত্যা করার পর তাদের মনগড়া বয়ানকে বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। এই মর্মস্পর্শী হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশ জুড়েই ক্ষোভ ও বিক্ষোভে আলোড়িত। জ্বলে উঠেছে বাংলাদেশ। ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষী নীতির কারণেই সীমান্তে রক্তপাত থামছে না। বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাকে ‘ব্লাড-স্পোর্ট’ বা রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে নতজানু রাখার এটি একটি আধিপত্যবাদী বার্তা।”
‘এতদিন ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিএসএফের হাতে সাধারণ বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। আর এখন সীমান্তে বিজিবিরও নিরাপত্তা নেই। অন্য দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনীর হাতে আরেকটা স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনী হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং এটির সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আরো বলেন, “বিএসএফ এর ‘ডেলিবারেট কিলিং’ এখন সর্বজনবিদিত। নিয়ন্ত্রণহীন এসব হত্যাকাণ্ডের আশকারা দেয়া দিল্লির উগ্রতা আর ঢাকার নীরবতা।”
তারা বলেন, ‘নাগরিকদের জীবনের চেয়ে দখলদার আওয়ামী মন্ত্রীদের ক্ষমতা খুব জরুরি। দেশবাসীকে পরাধীন রেখে ক্ষমতা ভোগ করাই আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শ। স্বভূমির সীমানায় কাউকে শান্তিতে রাখেনি আওয়ামী সরকার। এখন তাদের বন্ধুপ্রতীম দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক এবং সীমান্তরক্ষীদের প্রাণ সংহার করা হচ্ছে। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হলেও তাদের নীতি নির্ধারকদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গভীরতা অর্জিত হয়নি।’
‘সেজন্যই বাংলাদেশ সীমান্তে বেআইনী হত্যাকাণ্ডে তারা কোনো দায়বোধ করে না। ফেলানীসহ সকল হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক মহল এমনকি ভারতের বেশকিছু মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেও ভারতীয় কতৃর্পক্ষ এর কোনো বিচার বা প্রতিকার করেনি। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর হৃদয়বিদারক লাশের দৃশ্য দেখে বাংলাদেশের মানুষের মনে এখনো ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। পাশাপাশি নিহত ব্যক্তির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’