বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু পেঁয়াজ, বেড়েছে মুরগির দাম

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

বাজারে নতুন আলু ওঠার পর সাধারণত দাম কমে। কিন্তু আলু বাজারে এবার উল্টো চিত্র। কৃষকরা নতুন আলু ঘরে তুললেও সুখবর নেই আলুর বাজারে। খুচরা বাজারে আলুর দাম আগের মতোই ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দেশী লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮৫ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। এর সাথে বেড়েছে মুরগির দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১০ টাকা বেড়ে ২১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, আগের থেকে কিছুটা দাম কমেছে। নতুন আলু-পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এখন নতুন তাই দাম বেশি। আর কিছু দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হবে আলু-পেঁয়াজের দাম। দফায় দফায় দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর জরুরি তিনটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের আলোকে আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫-৩৬ টাকা, দেশী পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪-৬৫ টাকা আর ডিমের পিস সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

সরকার যে দিন দাম নির্ধারণ করে দেয় সে দিন থেকে উল্টো বাড়তে থাকে এসব পণ্যের দাম। মাঝখানে ৬৫ টাকার পেঁয়াজের দাম কয়েক গুণ বাড়ে। আলুর দামও বাড়তে থাকে। তবে বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ডিমের দাম। দাম বেঁধে দেয়ার পরও সেই দাম কর্যকর না হওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।

বাজারে সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। শুক্রবার ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগি, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা দরে। শুধু ব্রয়লার নয়; সোনালি ও লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বাজারগুলোতে সোনালি ৩২০ দেশী মুরগি ৫০০-৫২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। দুই মাস ধরেই মুরগির দাম বাড়ছে। এতে আমাদের বিক্রিও কমে গেছে।

গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এখন সরু (মিনিকেট) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে; যা ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা ছিল। মাঝারি (বিআর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে সর্বোচ্চ তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। দুই টাকা বেড়ে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোট ঘিরে গত কয়েক দিন প্রায় সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ কিছুটা কম ছিল। সরবরাহ বিঘিœত হওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে।

ক্রেতারা বলছেন, সরকারের ভোটের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর অতিমুনাফা লোভী অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। যেকোনো উছিলায় ব্যবসায়ীরা হুটহাট পণ্যের দাম বাড়ায়। মানুষকে তারা জিম্মি করে ফেলেছে। জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে দ্রুত এই বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা প্রয়োজন।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মুলা ও পেঁপে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে গরুর গোশত বেঁধে দেয়া দাম ৬৫০ টাকা হলেও রাজধানীর বেশির ভাগ বাজারে ওই দামে গরুর গোশত মিলছে না। প্রতি কেজি গরুর গোশত এখন ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ গোশত বিক্রির দোকানে নেই মূল্য তালিকাও।
মুদি বাজারে আগে ছোলার কেজি ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এ ছাড়া দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। প্রতি কেজি ভালো মানের মসুর ডাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে; যা আগের থেকে ১০ টাকা বেশি।

বাজারে আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে।

এখন বাজারে প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

মাছের বাজারে মাঝারি মানের চাষের পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। বড় আকারের চাষের তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আর মান ও আকারভেদে চাষের রুই মাছের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। তবে চিংড়ির দাম তেমন কমেনি। প্রতি কেজি কিনতে এখনো গুনতে হচ্ছে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *