ডিসেম্বর মাসটা অনেকটা উষ্ণতায় কেটে গেল। তবে নতুন বছরের শুরুতে শীতের সামান্য ছোঁয়া মিলতে পারে। চিরকালই ডিসেম্বর যায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের ছোঁয়ায়। কিন্তু এবার শৈত্যপ্রবাহের ঝাপটাও লাগেনি। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের একটি জেলায় তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে; কিন্তু ২৪ ঘণ্টা না যেতেই তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তবে আজ রোববার থেকে তাপমাত্রা সামান্য কিছুটা নেমে যেতে পারে যদিও শৈত্যপ্রবাহের মতো হবে না। আবহাওয়া অফিস বলেছে, ডিসেম্বরে দেশের গড় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা এর নিচে থাকার কথা। তবে গ্রামাঞ্চলে শেষ রাতে সামান্য কিছু শীত অনুভূত হলেও ঢাকা শহরে আবহাওয়া অনেকটা গরম। ঢাকায় ঘরের দরোজা-জানালা ভালো করে বন্ধ করে দিলে লেপ-কম্বল ছাড়াই ঘুমানো যাচ্ছে। গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে রাজধানী ছিল অনেক গরম। জ্যাকেট তো দূরের কথা ভারী জামা-কাপড়ও অসহ্য মনে হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এবারের ডিসেম্বর মাসটা গেছে অপেক্ষাকৃত উষ্ণতায়। ডিসেম্বরে গত ৩০ দিনে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ছিল, যা অন্যান্য বছরের চেয়ে ব্যতিক্রম।’ তিনি বলেন, এটা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে গেছে, গ্রীষ্মকালে তাপ প্রবাহের (হিটওয়েভ) মাত্রা ও দিন বেড়েছে। দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী এক নাগাড়ে তিন সপ্তাহ তাপ প্রবাহের কবলে কেটেছে গত গ্রীষ্মের সময়টা। বাংলাদেশেও গত গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ছিল অনেক বেশি। অন্য দিকে ডিসেম্বর মাসে উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের (ঠাণ্ডা হাওয়াযুক্ত উচ্চচাপ) যে বর্ধিতাংশের প্রভাব বাংলাদেশে পড়ে এ বছর এরও কোনো প্রভাব পড়েনি। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এ-সংলগ্ন এলাকায় বয়ে গেলে বাংলাদেশে ঠাণ্ডা বাড়ে। কিন্তু এবার তা-ও হয়নি। উল্লেখ্য উচ্চচাপ বলয় বয়ে চলার সময় উপর থেকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বায়ু নিচের দিকে নেমে আসে। এ বছর এর কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি বলে ডিসেম্বরটা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি উষ্ণতায় কেটেছে। এবার যে উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এসেছে তা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্তই বিস্তৃত ছিল। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এর ছোঁয়া লাগেনি। আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের এ প্রভাবের সাথে এল নিনুর একটি সম্পর্ক রয়েছে। এবার এল নিনু সক্রিয় এবং এই এল নিনু সক্রিয় থাকলেও বিশ্বব্যাপী তথা বাংলাদেশে শীতকালে বেশ গরম পরিবেশ থাকে। এ দিকে কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া গবেষক মো: মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, বাংলাদেশে শিগগিরই শীতের মাত্রা কিছুটা বাড়বে।
সামনের কয়েকদিন ভারতের দিক থেকে একটি ঘন কুয়াশার চাদরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ছেয়ে যাবে। এর ফলে শৈত্যপ্রবাহের মতো তাপমাত্রা বিরাজ করতে পারে কয়েকটি জেলায়। গতকাল শনিবার তিনি জানিয়েছেন, দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে অর্থাৎ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের উপর দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ভারী কুয়াশা প্রবেশ করা শুরু করেছে। খুবই ঘন কুয়াশা পুরো দেশের সব জেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘন কুয়াশা তিন থেকে চার দিন স্থায়ী হতে পারে। এই কারণে গতকাল শনিবার থেকে সন্ধ্যার পর ভারী কুয়াশায় ঢেকে যেতে পারে রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলো। ফলে খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের মতো ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। অন্য দিকে আজ রোববার সন্ধ্যার পর থেকে সোমবার পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যেতে পারে ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলো। এটা মঙ্গলবার পর্যন্ত ময়মনসংিহ, ঢাকা, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের আকাশ পর্যন্ত ছেয়ে যেতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের সময় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকতে পারে। রংপুর, রাজশাহী বিভাগের সব জেলা ও খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া জেলায়।
আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সীতাকুণ্ডে ৩০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।