ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি। নেপিয়ার যেন দু হাত ভরে দিলো বাংলাদেশকে। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দাপুটে জয় পেয়েছে টাইগাররা। কিউইদের দেয়া ১৩৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মাত্র ৫ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে শুরু হয় খেলা। এদিন টসে জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ফলে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৩৪ রান তুলতে পারে কিউইরা। এই রান তাড়া করতে নেমে ৮ বল হাতে থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
এর মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে জিতলো টাইগাররা। গত দেড়যুগে যা পারেননি তামিম-সাকিবরা, তাই করে দেখালেন নাজমুল শান্ত। ঘরের মাঠে চেনা দর্শকদের সামনে নিউজিল্যান্ডকে দিলেন হারের তিক্ত স্বাদ। ফলে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিতে ১-০ তে এগিয়ে রইল তারা।
এদিন অনেক ‘প্রথম’ সঙ্গী করেই ‘প্রথম’ জয়ের খোঁজে নামে বাংলাদেশ। যার একটি প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে দলকে নাজমুল হোসেন শান্তের অধিনায়কত্বও।
অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট আর ওয়ানডেতে আগেই অভিষেক হয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তের। বুধবার নেপিয়ারে প্রথমবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে টস করলেন তিনি। ভাগ্যও দিলো সায়, অভিষেকেই টসে জিতেছেন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন আগে ফিল্ডিং করার।
নেপিয়ারের বুকে কাঁপন তোলা সুইং সহায়ক মাঠে যেন বাজি খেললেন শান্ত। প্রথম ওভারেই বল তুলে দিলেন স্পিনার শেখ মেহেদীর হাতে। বাজি ফলে গেলো, ভরসার মান রাখেন মেহেদী। চতুর্থ বলেই ভেঙে দেন টিম সেইফার্টের উইকেট। তিন বল খেলে ০ রানেই ফেরেন সেইফার্ট।
পরের ওভারে শান্ত বোলিংয়ে আনেন শরিফুল ইসলামকে। উইকেট নিতে তর যেন সইছিলো না তার। দ্বিতীয় বলেই ফেরান ফিন এলেনকে, ১ রান করে উইকেটের পেছনে সৌম্যকে ক্যাচ দেন তিনি। পরের বলেই গোল্ডেন ডাক উপহার দেন গ্লেন ফিলিপসকে।
ফিলিপসকে ০ রানে ফিরিয়ে শরিফুল কাঁপিয়ে দেন কিউই দুর্গ। ৮ বলে মাত্র ১ রানে ৩ উইকেট নেই তখন নিউজিল্যান্ডের! জোড়া উইকেট তুলে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়ে তোলেন শরিফুল। যদিও তা আর হয়নি, তবে সাহসী হয়ে উঠে গোটা দল।
এরপর ডেরিয়েল মিচেল চেষ্টা করেছিলেন ইনিংসের হাল ধরার। তবে অল্পতেই তাকে বেঁধে ফেলেন শেখ মেহেদী। ১৫ বলে ১৪ করে তিনিও ধরেন সাজঘরের পথ। ৫ ওভারে ২০ রানে ৪ উইকেট নেই তখন নিউজিল্যান্ডের। ঘরের চেনা মাঠে যেন তারাই অচেনা তখন।
সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন মার্ক চাপম্যান ও জিমি নিশাম। তবে ইনিংসের দশম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই চাপম্যানের চাপ কমান রিশাদ হোসেন। ১৯ বলে ১৯ রানে ফেরেন চাপম্যান।
অধিনায়ক সান্টনারকে নিয়ে ৯০ এর ঘরে সংগ্রহ পৌঁছান নিশাম। তাদের জুটি ভেঙে দলকে উদ্ধার করেন শরিফুল। ২৩ রান করা সান্টনারকে ফেরান তিনি। ১৬.৩ ওভারে ১১০ রানের মাথায় মোস্তাফিজ জিমি নিশামকে ফেরালে ফেরে স্বস্তি। ২৯ বলে ৪৮ রানের ইনিংস উপহার দেন নিশাম।
এরপর টিম সাউদিকেও ফেরান মোস্তাফিজ। অবশ্য এই উইকেটটা হতে পারতো শরিফুলের। তবে পরপর দুইবার তার বলে ক্যাচ উঠলেও ভুল বুঝাবুঝিতে ক্যাচ ছেড়েছেন ফিল্ডাররা! শেষ ওভারে উইকেট পেয়েছেন তানজিম সাকিবও। সব মিলিয়ে ৯ উইকেটে ১৩৪ রান করেছে নিউজিল্যান্ড।
ক্যাচ পড়লেও তিনটি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন শরিফুল। শেখ মেহেদী ও মোস্তাফিজ পেয়েছেন দুটো করে উইকেট। রিশাদ ও সাকিব পেয়েছেন একটা করে উইকেট।
লক্ষ্য তাড়ায় খুব ভালো শুরু না পেলেও একেবারে মন্দ হয়নি। ৩ উইকেট হারিয়ে ১৩.২ ওভারে ৯৬ রান স্কোরবোর্ডে তুলে ফেলে বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের ছোট ছোট ইনিংসগুলো পথ দেখায় দলকে। আর একপ্রান্ত আগলে পড়ে থাকেন লিটন দাস।
এদিন দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট পতন বাংলাদেশের। টিম সাউদিকে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে ফিরলেন রনি তালুকদার। ৭ বলে ১০ রান করে এডাম মিলনের শিকার তিনি। ১৩ রানেই ভাঙে লিটন দাসের সাথে তার উদ্বোধনী জুটি।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরেছেন বড় ইনিংস খেলতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে। উইকেটে থিতু হবার পর তিনি ফেরেন ১৪ বলে ১৮ করে। তবে তার ছোট এই ইনিংসে ভর করেই পাওয়ার প্লেতে ভালো সংগ্রহ পায় দল।
ভালো শুরুর পরও ইনিংস টানতে পারেননি সৌম্য সরকারও। উইকেটের চারদিকেই যখন শট খেলতে শুরু করেছেন, তখনই ফিরেছেন সিয়ার্সের শিকার হয়ে। আউট হবার আগে ১৫ বলে করেছেন ২২ রান।
সৌম্য ফিরিতেই বাঁধে বিপত্তি। ১ রান তুলতেই আফিফ হোসেনের উইকেট খুইয়ে বসে দল। তাতে শঙ্কার কালো মেঘ বাসা বাঁধতে থাকে। তবে আর বিপদ আসতে দেননি লিটন, জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন তিনি। সাথে ছিলেন শেখ মেহেদী। লিটন ৩৬ বলে ৪২ ও মেহেদী অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ১৯ রানে।