সংসদ সদস্যদের সম্পদ কীভাবে বহুগুণ বেড়েছে তা সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাংলাদেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সিপিডির এই ফেলো বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় সম্পদ বৃদ্ধির হার দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। যেখানে একটি প্লটের দাম ১ কোটি টাকা; তা মাত্র ১ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।’
তারপরও সম্পদ শতগুণ বেড়ে যায়, তাহলে আসল চিত্রটা কী? অধ্যাপক মুস্তাফিজ প্রশ্ন তোলেন, ‘এটা দেখে বোঝা যাচ্ছে না আসলে সম্পদ কতটা বেড়েছে।’
তিনি বলেন, প্রার্থীদের হলফনামায় অনেকের সম্পত্তি শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে এত বিপুল পরিমাণ সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে তা দেখার বিষয়।
অধ্যাপক মোস্তাফিজ বলেন, ‘ওই সম্পত্তিগুলো এত বেড়েছে যে সরকার এবং তাদের দলের উচিত এই সম্পত্তিগুলোর উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া। একই সাথে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) তাদের সম্পদের উৎস খুঁজে বের করতে হবে।’
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, সবকিছুই একটি ‘অসাধু চক্রের’ তৈরি।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ছে এবং আগ্রাসী ঋণ প্রদানের কারণে কিছু ব্যাংকও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
এটি নিয়ন্ত্রণ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার অনুমতি দেয়া উচিত, অন্যথায় কেউ এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, এটি রাষ্ট্রকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে বলেও জোর দেন সিপিডির এই ফেলো।
তিনি বলেন, ‘আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণের বিষয়টি আগেও বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য আইনগত দুর্বলতা ও বিধি-বিধান ঠিক করতে হবে। কারণ ব্যাংকিং খাত অর্থনীতির রক্ত। এই খাতের সমস্যা পুরো অর্থনীতির ওপর পড়ে,’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, খেলাপির বিপরীতে ব্যাংককে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রভিশন করতে হয়। এর মানে হলো, টাকা অর্থনীতিতে অংশ নিতে পারছে না, ব্যাংকে পড়ে আছে।
এতে করে ব্যাংকের ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং আয় কমে যাচ্ছে।
ড. মোস্তাফিজ বলেন, ধরুন ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে সুদ দিচ্ছে, কিন্তু ব্যাংক ১০০ টাকার মধ্যে ৮০ টাকা ঋণ দিতে পারছে। অর্থাৎ ঋণের সুদের হার বাড়াতে হবে, এটি আবার বিনিয়োগে প্রভাব ফেলবে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমেরিকা নিজেদের সুবিধার জন্য বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা (নিষেধাজ্ঞা) আরোপ করে।
প্রয়োজনে ভেনেজুয়েলার মতো দেশের সাথে চুক্তি করতে হবে। অতএব, এটি জোর দেয়া উচিত যে তারা অনুমোদন করবে কিনা সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে তারা অনুমোদনের সুযোগ পাবে না। আমাদের শ্রমিকদের মজুরি ও অধিকার নিশ্চিত করারও পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। বিশ্বের পোশাকের বাজার ৭০০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। এর মতো বড় খাত আর নেই। রফতানি বৈচিত্র্যময় করতে হবে, নতুন বাজারে যেতে হবে।
এখনো এই বাজারের একটি বড় অংশ দখল করার সুযোগ রয়েছে, এর জন্য বাংলাদেশকে আরো আধুনিকীকরণ করতে হবে।
তিনি চামড়া খাত ও ওষুধ রফতানির ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ দেন। বৈশ্বিক বাজারে এই পণ্যগুলোর জন্য একটি সম্ভাব্য ভবিষ্যত রয়েছে।
ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা।
সূত্র : ইউএনবি