অসহযোগ আন্দোলনের গণসংযোগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় পথসভা কর্মসূচি পালন করেছে গণঅধিকার পরিষদ। পথসভা শেষে প্রেসক্লাব থেকে গণসংযোগের মিছিল শুরু করে বিজয়নগর পানিরট্যাংকির মোড়ে এসে শেষ হয়।
প্রেসক্লাবে পথসভায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হাত ভেঙে দিতে, পুড়িয়ে দিতে বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। এখন তারা বিরোধী নেতাদের বাসা-বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ করছে। দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর পুনট্রি এলাকার গণঅধিকার পরিষদের এক নেতার বাসায় রাতের আধারে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট চালায় আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা। এরা পাকিস্তানের হানাদারদের চেয়েও ভয়ংকর। সরকার বিরোধীদের ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা করছে। ১৭ তারিখ ডিএমপি থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ১৯ তারিখ স্ট্যান্ডবাই ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্স রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তারা ১৯ তারিখ ভয়াবহ নাশকতা করে বিরোধীদের ওপর দায় চাপিয়ে জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তুলবে এটা সরকারের প্ল্যান ছিলো। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী রেলে আগুন দিয়েছে। এর আগে গাজীপুরেও একই কাজ করেছে। এমনকি তদন্তের আগেই পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন- এগুলো হরতাল-অবরোধকারীরা করেছে। এটা পরিষ্কার- যারা এগুলো বলছেন, তারাই এ কাজ ঘটিয়েছেন।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন ইসরাইল হামাসকে নির্মূল করার জন্য ফিলিস্তিনের সুড়ঙ্গ গুলোতে পানি ঢালছে, এসব কাজ শয়তান ছাড়া করতে পারে না। একইভাবে এই সরকার ১৩ সালে বালির ট্র্যাক রেখে পথ বন্ধ করেছে, আন্দোলন ঠেকাতে গাড়ি পুড়িয়েছে, মানুষ পুড়িয়েছে, নাশকতা করেছে। এখনো করছে। এগুলো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশের এজেন্সি করছে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পাশের দেশের গোলামি করছে। বাংলাদেশে কে সরকারি দল হবে, কে বিরোধী দল, কে এমপি হবে- তারা ঠিক করে দেয়। এভাবে বাংলাদেশকে একটি সঙ্ঘাতপূর্ণ ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে ভারত এই একতরফা নির্বাচনকে সহযোগিতা করছে।
নুর বলেন, হরতাল-অবরোধের পর অসহযোগ আন্দোলনের বিকল্প নাই। এই আন্দোলন বিভিন্ন ধাপে সাজানো। সময়মতো সঠিক কর্মসূচি হবে। তিন দিনের গণসংযোগের পরও ২৪ ডিসেম্বর সর্বাত্মক অবরোধ হবে। ৭ তারিখের আগেই চূড়ান্ত ফলাফল অর্জন করতে হবে। দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় জনগণকে এই আন্দোলনে শরীক হওয়ার আহ্বান জানাই।
দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন বলেন, গতকাল সিলেটে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৌকা, ডামি নৌকা, স্বতন্ত্র নৌকার প্রার্থীরা সব এক মঞ্চে বসেছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের বিপরীতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র, ডামি প্রার্থী। এটা কোনো নির্বাচন? এই নির্বাচন জনগণ বর্জন করেছে।
তিনি বলেন, আমরা ও মামুরা মিলে যে নির্বাচন, এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে যাবে না। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দয়াদাক্ষিণ্যে ২৬টি আসন ভাগ পেয়ে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে গিয়েছে। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে গেলেই নির্বাচন বৈধ হয়ে যাবে না। সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন চলছে, জনগণ ভ্যাট, ট্যাক্স, খাজনাসহ প্রদেয় বিল দেবে না। এই আন্দোলন একটি জনপ্রিয় আন্দোলন। মাহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধুসহ অনেকে অতীতে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। এই অসহযোগ আন্দোলনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অংশ নিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাবে। এই সরকারকে ১৪ সালে ভারত ক্ষমতায় থাকতে সহযোগিতা করেছে। এইবার ডামি নির্বাচনেও ভারত সহযোগিতা করছে। এভাবে ভারত বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন উপ-নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের সমর্থন মাত্র ১০ শতাংশ। কিন্তু ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, ৭০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। তারা কারচুপি করে এভাবেই ভোটের হার বাড়াবে। কিন্তু প্রকৃত চিত্র হলো ৯০ শতাংশ জনগণ আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
পথসভায় সঞ্চালনা করেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামান, এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান।