গাজীপুরে সকল নৌকার বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরের অবস্থান নতুন বার্তার জন্ম দিচ্ছে!

Slider টপ নিউজ

গাজীপুর: গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরে মূলত পাঁচটি আসনেই নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি আওয়ামীলীগ থেকে হওয়া সকল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কথা বলছেন। তিনি ১৫ বছরের অত্যাচার নির্যাতনের জবাব দিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। একজন আওয়ামীলীগ নেতার এ ধরণের অবস্থান দলীয় বিবেচনায় অপরাধ কি না সেটা দল বলতে পারবে। তবে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জাহাঙ্গীরের নৌকা বিরোধী অবস্থানের নেপথ্যে পাওয়া গেছে নানা কারণ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ সালে জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ভাইস-চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনি মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রতীক পাওয়ার পর জাহাঙ্গীর আলমকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় গণভবনে। সেখান থেকে ফিরে তিনি দলীয় মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে সমর্থন করেন। ২০১৫ সালে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৮ সালের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র হন। মেয়র হওয়ার তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগে তিনি মেয়র পদ ও দলীয় পদ হারিয়ে আওয়ামীলীগ থেকে বহি:স্কার হন। পরবর্তি সময় দল তাকে ক্ষমা করে। ২০২৩ সালে গাজীপুর সিটির তৃতীয় নির্বাচনে আবারো জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হন। দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি তার মাকে প্রার্থী করেন। জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনের নির্বাচন চলাকালীন সময়ে মায়ের পক্ষে অব্স্থান নেয়ায় জাহাঙ্গীর আলমকে আবার বহি:স্কার করে আওয়ামীলীগ। কিন্তু এরপরও জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন মেয়র নির্বাচিত হন। পরবর্তি সময় দল তাকে আবারো ক্ষমা করে। বর্তমানে জাহাঙ্গীর আলম তার মায়ের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। একই সঙ্গে রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথমে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর-২ আসনে গাজীপুর মহানগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ আহবায়ক সাইফুল ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেন। এই আসনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর সাইফুল ইসলামকে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী করেন। এক সাথে এক মঞ্চে বক্তব্যও দেন। সাইফুল ইসলাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার দিন নেতা-কর্মমীদের নিয়ে গাজীপুর নগর ভবনে আপ্যায়নও করান। কিন্তু শেষ সময়ে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনকে প্রার্থী করেন । জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থনে দুই জন স্বাতন্ত্র প্রার্থীই বর্তমানে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন গাজীপুর-২ আসনে।

সম্প্রতি জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর-১ আসনে নৌকার প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগে রেজউল করিম রাসেল, গাজীপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের প্রতিদ্বন্ধি আলিম উদ্দিন বুদ্দিন ও গাজীপুর-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির প্রতিদ্বন্ধি আখতারউজ্জামানকে সাথে নিয়ে একই মঞ্চে শোডাউন করে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেয়ার আহবান জানান। ওই শোডাউনে জাহাঙ্গীর আলম তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দেয়ার পক্ষে ১৫ বছরের অত্যাচার নির্যযাতনের জবাব ব্যালটের মাধ্যমে দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি অনুরোধ করেন। শোডাউনের পর জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর-১,২ ও ৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা করছেন। গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে জাহাঙ্গীরের অবস্থান নেয়ার কারণে বাকী দুটি আসনেও এর প্রভাব পড়েছে। ফলে গাজীপুরে সকল নৌকার বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর আলমের নৈতিক অবস্থান আওয়ামীলীগ সরকারের বা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান তা এখন পরিস্কার।
কয়েকদিন আগে গাজীপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেলের চাচা গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান মতি জাহাঙ্গীর আলমকে নৌকার পক্ষে আসার আহবান জানিয়েছেন। অনুরুপ আহবান এসেছে গাজীপুর-১ ও ৩ থেকেও। নৌকার বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর আলমের প্রকাশ্যে সংক্ষুব্ধ অবস্থান গাজীপুর তথা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে কি না, তা নিয়ে নানা ধরণের মুখরোচক আলোচনাও আছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে জাহাঙ্গীর আলম শোডাউন ও বিভিন্ন সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেলক হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ করেছেন। তিনি সংক্ষুবদ্ধ ও উত্তেজিত হয়ে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণকথাও বলেছেন। এ নিয়ে নানা মহলে নানা ধরণের প্রতিক্রয়া এখন চাওড় হয়ে আছে।

জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যগুলো পর্যযালোচনা করে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের সকল পতনের পিছনে মোজাম্মেল হক, জাহিদ আহসান রাসেল ও চুমিকর হাত ছিল। তাই তিনি প্রতিশোধ নিতে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলমের নৌকা বিরোধী অবস্থান বলে দেয়, তিনি চান তার মত যেন এই দুই মন্ত্রী ও এক সাবেক প্রতিমন্ত্রীর অবস্থা হয়। আর সেই প্রতিশোধ বাস্তবায়নে এখন মরিয়া জাহাঙ্গীর আলম।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম নৌকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়া কারণে অনেক আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করতে সাহস পাচ্ছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে সাত জানুয়ারী নির্বাচনে গাজীপুরের পাঁচটি আসন ধরে রাখতে আওয়ামীলীগের অনেক বেগ পেতে হতে পারে।
এ বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য নিতে জাহাঙ্গীর আলমকে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *