গাজীপুর: ১৯৫ গাজীপুর-২(সদর-টঙ্গী) আসনে প্রায় দশ হাজার লোকের অংশগ্রহনে খাতিব-ওলামা-মাশায়েখ সমাবেশ হয়েছে। আটটি গরু জবাই করে প্রায় আট হাজার খাবার প্যাকেট দিয়ে হয়েছে দুপুরের আপ্যায়ন। মঞ্চে ছিলেন দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সহ তিন জন প্রার্থী। মঞ্চ থেকে ঘোষনা দেয়া হয়, তিন হাজার খতিবকে প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা করে সম্মানী দেয়া হবে যা জানুয়ারীর এক তারিখ থেকে শুরু হবে। দুই বিঘার উপর কোরান গবেষনা কেন্দ্র তৈরী করে দেয়া হবে। দেয়া হবে খতিবদের বাসস্থান ও সন্তানদের চাকুরী। অনুষ্ঠান থেকে তিন হাজার খতিবের মাধ্যমে ২৪ লাখ মানুষের কাছে দোয়া করার ম্যাসেজ দেয়া হয়। অনুষ্ঠান থেকে গাজীপুর-১, গাজীপুর-২ ও গাজীপুর-৫ আসনের তিন জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নাম বলে সকলের নিকট দোয়া চাওয়া হয়। তাদের মধ্যে দুই জন স্বতন্ত্র প্রার্থী সহ তিন জন প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। প্রচারণা শুরু হলে সকলকে কাজ করার আহবান জানানো হয় সমাবেশে। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গাজীপুর সিটিকরপোরেশন। সভাপতিত্ব করার কথা অনুষ্ঠান গেটে লেখা থাকলেও গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম(যুগ্ম সচিব) তা অস্বীকার করে বলেছেন আমি অসুস্থ। এ ধরণের সমাবেশ আছে কি না জানিনা।
আজ শনিবার(১৬ ডিসেম্বর) গাজীপুর-২ আসনের গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়দানা হাজীর পুকুর নামক স্থানে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে গাজীপুর সিটিরপোরেশন এলাকার দুই হাজার পাঁচশত মসজিদের তিন হাজার খতিব উপিস্থত ছিলেন। সাথে তিনজন প্রার্থীর কর্মী সমর্থক মিলে প্রায় আট হাজার লোকের সমাগম।
গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিকুল আজমের(যুগ্ম সচিব) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে গাসিক মেয়র জায়েদা খাতুন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। তার জায়গায় তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর-২(সদর-টঙ্গী) আসনের স্বাতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, গাজীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল ও একই আসনের ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা ফজলুর রহমান সহ গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর ও দলীয় নেতা-কর্মীরা। অনুষ্ঠানটি সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়নি। পরিচয়পত্র দেখে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের দুই হাজার পাঁচশত মসজিদ আছে, খতিব আছে তিন হাজার। আগামী জানুয়ারী মাসের এক তারিখ থেকে প্রত্যেক খতিবকে তিন হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দেয়া হবে, যা তাদের নিজ নিজ একাউন্টে চলে যাবে প্রতিমাসের এক তারিখ। দেশের অবস্থা ভালো হলে এই ভাতা আরো বাড়ানো হবে বলে বলেন জাহাঙ্গীর আলম। এই কাজের পরে শিক্ষক ও অন্যান্যদের জন্যও সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। আলেম ওলামাদের জন্য গাজীপুর সিটির ভেতরে দুই বিঘা জমির উপর কোরান গবেষনা কেন্দ্র স্থাপন করে দেয়া হবে। ইমাম খতিবদের মধ্যে যাদের থাকার বাড়ি নাই তাদের বাড়ি তৈরী করে দেয়া হবে। তাদের সন্তানদের চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। এখন থেকেই চাকুরীর জন্য যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আলেম ওলামারা আমাদের ধর্মীয় নেতা। আমি মেয়র থাকার সময় এই ভাতা চালু করেছিলাম। আমাকে সরিয়ে দিয়ে তারা ভাতা বন্ধ করেছিল। আজ থেকে আবার ভাতা চালু করলাম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দেশে ৯০ ভাগ মুসলামান। মুসলানদের বাদ দিয়ে কোন কাজ করা যাবে না। তিনি বলেন, গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের খতিবদের ভাতা বন্ধ করলেও হিন্দু মন্দিরের ভাতা বন্ধ করা হয়নি। আমাকের ষড়যন্ত্র করে সরিয়ে দিয়ে একজন কাউন্সিলরকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে এই কাজ গুলো করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে তিনজন প্রার্থী তাদের জন্য দোয়া ও সমর্থন চান।
আয়োজক সংস্থার প্রধান ও অনুষ্ঠানের সভাপতি( সমাবেশের গেটে নাম লেখা) গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম(যুগ্ম সচিব) বলেন, আমি যাইনি। আমাদের সচিব হান্নান সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেন। বিষয়টি আমি জানিনা।
গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের সচিব(উপসচিব) মো: আ: হান্নান বলেন, আজকে আমাদের কোন অনুষ্ঠান ছিল না। কাউন্সিলররা করে থাকতে পারেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র ও বর্তমান মেয়র জায়েদা খাতুনের ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গাজীপুর জেলা রিটার্নিং অফিসার আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সেখানে কোন প্রার্থী ভোট চেয়ে থাকলে ছবি বা ভিডিও দেন। আমি বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম সংক্রান্ত অনুসন্ধান কমিটির নিকট পাঠাব। তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেবে।
প্রসঙ্গত: গাজীপুর-১ আসনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিপরীতে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল, গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী যুব ও ক্রীড়াপ্রতিন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম এবং গাজীপুর-৫ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকির বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামান প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। আরো প্রতিদ্বন্ধি থাকলেও এই তিনটি আসনে নৌকার প্রতিদ্বন্ধীদের বিপরীতে চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। অন্যায়ভাবে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র ও দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার নেপথ্যে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়াপ্রতিমন্ত্রী সহ অনেকের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে জাহাঙ্গীর আলম এই তিনজনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন বলে জাহাঙ্গীর আলমের দেয়া অসংখ্য বক্তব্য থেকে ধারণা স্পষ্ট হয়। ইতোমধ্যে নৌকার বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা এই সকল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম একাধিক সভা সমাবেশ করেছেন ও যা অব্যাহত আছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীর আলম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীর সাথে একই মঞ্চে থেকে মুক্তযুদ্ধমন্ত্রীর সমালোচনাও করেছেন স্পষ্ট ইঙ্গিত করে।