টঙ্গী(গাজীপুর)প্রতিনিধি: গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের ৫৫নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের পর দিন নৌকার পক্ষে কাজ করা ও না করা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিএনপির দুই পক্ষের দুই জন নেতা আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন, অবিভক্ত টঙ্গী থানা মৎস্যজীবী দলের সাবেক সভাপতি আমির হোসেন ও টঙ্গী পশ্চিম থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রহমান বাবু।
বৃহসপতিবার(১৪ ডিসেম্বর) বেলা দুইটায় টঙ্গীর মিলগেট কো-অপারেটিভ মার্কেটের সামনে এই সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টঙ্গীতে বিএনপির দুটি গ্রুপ। এই দুই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার ও তার ভাই গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক সালাউদ্দিন সরকার। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটিকরপোরেশন নির্বাচনে টঙ্গীর ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন সরকারপন্থী গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য( পরে বহি:স্কৃত) আবুল হাসেম। জনশ্রুতি আছে, আবুল হাসেম আওয়ামীলীগের সাথে লিঁয়াজো করে কাউন্সিলর হয়েছেন। বর্তমানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেলের পক্ষে কাজ করে প্রতিদান দেয়ার জন্য বুধবার(১৩ ডিসেম্বর) বিকেল চারটায় টঙ্গীর নিউ অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলের ভেতরে নৌকা প্রতীকের নেতৃবৃন্ধের সাথে বিএনপির কাউন্সিলর আবুল হাসেমপন্থীদের একটি গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে জাহিদ আহসান রাসেলের চাচা গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান মতি সহ সিনিয়র আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্ধ ও বিএনপির কাউন্সিলর আবুল হাসেমের নেতৃত্বে বিএনপির একটি দল নৌকার পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বৈঠকে ৫৫নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি অংগ ও সহযোগী সংগঠন নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করবে বলে একমত হয়। বৈঠকের একটি উপস্থিতি তালিকা পাওয়া গেছে। তালিকায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় পক্ষের ২৭জন করে মোট ৫৪ জনের নাম লেখা হয়েছে।
এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত টঙ্গী থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি মনির আহম্মেদ বলেন, বৈঠকটা গোপনীয় ছিল না। প্রকাশ্যেই হয়েছে। হাসেম কাউন্সিলরকে বিজয়ী করতে আমরা সহযোগিতা করেছি। এখন তিনি আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন। এটা গোপন কোন বিষয় নয়।
এ বিষয়ে সাবেক বিএনপি নেতা ও কাউন্সিলর আবুল হাসেম বলেন, আমি নিউ অলিম্পিয়া টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান। আমার এমডি আওয়ামীলীগ নেতা মতিউর রহমান উরফে বিকম মতি। এমডির ফোনে আমি ওখানে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি তাদের ভোটের সভা চলছে। আমার কাছেও তারা ভোট চেয়েছে। সেখানে কোন সমঝোতা হয়নি।
বৃৃহসপতিবার সকালে বিএনপি-আওয়ামীলীগের গোপন সমঝোতার খবর প্রকাশিত হলে টঙ্গী বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে মতবিরোধ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। এই অবস্থায় বিএনপি নেতা হাসান সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিত টঙ্গী থানা মৎস্যজীবী দলের সাবেক সভাপতি আমির হোসেন দুপুর দেড়টার দিকে টঙ্গীর মিলগেট কোঅপারেটিভ মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। এসময় বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন সরকারপন্থী কাউন্সিলর আবুল হাসেমের ঘনিষ্ট লোক ও টঙ্গী থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রহমান বাবু আসলে দুই পক্ষের মধ্যে নৌকার নির্বাচন করা না করা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। আওয়ামীলীগের পক্ষে যেতে আব্দুর রহমান বাবু ও পক্ষে না যেতে আমির হোসেন অনঢ় থাকেন। এক পর্যায়ে দুই জনের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। দুই জনের সাথে থাকা সঙ্গীরাও জড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করেন। এতে দুই জনই আহত হয়। স্থানীয় লোকজন থামিয়ে দিলে সংঘর্ষ বড় আকার ধারণ করেনি।
এ বিষয়ে টঙ্গী থানা মৎস্যজীবী দলের সাবেক সভাপতি আমির হোসেন বলেন, নৌকার পক্ষে যাবার জন্য বাবু চাপ দিলে আমি রাজি হইনি। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারধর করে। তবে ঘটনাটি পত্রিকায় প্রকাশ করলে তার সমস্যা হবে বলে জানান এই নেতা।
এদিকে টঙ্গী পশ্চিম থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রহমান বাবুকে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
৫৫নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল ও বিএনপির বহিস্কৃত সাবেক নেতা আবুল হাসেম বলেন, আমির হোসেন একটু ভিন্ন রকম লোক। সে যুবদল নেতা বাবুর নাক ফাটিয়ে দিয়েছে। দুই জনই আহত হয়েছেন দাবী করে এই কাউন্সিলর বলেন, এই ঘটনাটা পত্রিকায় দিয়েন না। আপনি এক সময় আসেন চা খাই।
এ বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি কিছু জানিনা। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।