বরিশাল-৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুল হাফিজ মল্লিকের হলফনামায় দেয়া তথ্য দেখে বিস্মিত হয়েছেন বরিশালবাসীরা।
তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তার ৩০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে, যার মূল্য ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি ভরি স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৩৩৩ টাকা! এছাড়া ৫ কাঠার একটি সরকারি প্লটের দাম মাত্র ৪০০ টাকা। এছাড়া ২৯ হাজার টাকা মূল্যের সাড়ে তিন কাঠার একটি প্লট ও একটি ৬ তলা বাড়ি রয়েছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, কক্সবাজারের উখিয়ায় ১১৫ শতাংশের ওপর নির্মাণ করছেন রিসোর্ট। পাশাপাশি তার স্ত্রীর নামে কত ভরি স্বর্ণ রয়েছে তা উল্লেখ না করলেও ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
হলফনামায় দেয়া তথ্যে প্রার্থীদের সম্পদের এমন বিস্ময়কর দাম উল্লেখ করার বিষয়ে টিআইবি বরিশালের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, এটি অবিশ্বাস্য ও অগ্রহণযোগ্য। নির্বাচন কমিশনের উচিত এসব তথ্যের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাছাড়া ভোটাররাও এমন অসত্য তথ্য দেয়া প্রার্থীদের বয়কট করা উচিত।
হাফিজ মল্লিকের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তার বাৎসরিক আয় ২৫ লাখ ২৪ হাজার ৪৮৬ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকা, ব্যাংক আমানত থেকে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার আট টাকা ও পেনশন থেকে এক লাখ ৭৮ হাজার ৪৭৮ টাকা। তবে তার স্ত্রী কৃষিখাত থেকে বছরে পাঁচ লাখ এবং ব্যাংক আমানত থেকে এক লাখ ৭৪ হাজার ৭৯২ টাকা রোজগার করেন।
বিশ্লেষণে আরো দেখা গেছে, স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে তার ছয় কোটি ৬৪ লাখ ৯২ হাজার ৪৮৩ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে নগদ অর্থ ১৫ লাখ ৫০ হাজার, ব্যাংকে জমা এক কোটি ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৭ টাকা, বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ১০ শতাংশ শেয়ারে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা, ব্যাংকে স্থায়ী আমানত এক কোটি ২২ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৬ টাকা, ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাড়ি, ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ৩০ ভরি স্বর্ণ, ইলেকট্রিক সামগ্রী ৫০ হাজার টাকা, এক লাখ টাকার আসবাবপত্র, ৩৪ লাখ ছয় হাজার টাকা মূল্যমানের ২ দশমিক ৯৫ একর জমি, ৫ কাঠার সরকারি প্লট মূল্য ৪০০ টাকা, ৩ দশমিক ৫০ কাঠার একটি প্লট মূল্য ২৯ হাজার টাকা, ৬তলা বাড়ির মূল্য এক কোটি ২৮ লাখ টাকা।
হাফিজ মল্লিকের ঋণ রয়েছে আট কোটি ৮৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকার। এর মধ্যে তিনি আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করেছেন দুই কোটি ৮২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আর অগ্রিম বাসা ভাড়া নিয়েছেন পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টাকার। উখিয়া থানা এলাকায় রিসোর্ট নির্মাণের জন্য যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের কাছ থেকে তিনি ছয় কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল হাফিজ উদ্দিন মল্লিক আলোচিত নাম। ২০০১ সালে পাঁচ বছর চাকরির বয়স থাকলেও তাকে বাধ্যগত অবসরে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। এর আগে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন চাইলেও মহাজোটের সাথে সমঝোতায় এই আসনটি ছাড় দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এবার রাজনৈতিক নয়া সমীকরণে এখন পর্যন্ত আসনটিতে প্রার্থিতা বজায় রেখেছে। গুঞ্জন রয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সমঝোতায় আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হবে। তাহলে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন আবারো হাতছাড়া হয়ে যাবে রাজনৈতিক এই হেভিওয়েটের।
হাফিজ মল্লিক বর্তমানে ডিওএইচএস ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় বসবাস করলেও তার মূল বাড়ি দেখিয়েছেন বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কাকরধা মল্লিক বাড়ি। তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সাল এবং ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে একটি পদাতিক ব্রিগেড এবং একটি পদাতিক ডিভিশনের নেতৃত্ব দেন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৫ সালে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন।