উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে: নড়াইলের জমিদারদের রেখে যায়া বাঁধাঘাট দাঁড়িয়ে আছে চিত্রা নদীর পাড়ে। ১৬৫ বছরের কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নড়াইলের চিত্রা পাড়ের জমিদারদের বাঁধাঘাটটি। নাটোরের রাণী ভবানীর পতনের পর নড়াইলের জমিদার কালী শংকর রায় ছিলেন এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী জমিদার। খুলনা, যশোর ও নড়াইল জেলার বিশাল এলাকা ছিল এই জমিদারদের অধীনে। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, তবে কালের পরিক্রমা আর হিংস্র হায়েনাদের কালো হাতের থাবায় হারিয়ে গেছে অধিকাংশ স্থাপনা। প্রভাবশালী এই জমিদার নির্মাণ করেছিলেন চিত্রা পাড়ের জলজ তাজমহল খ্যাত বাঁধাঘাটটি। কালের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে এটি।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৯১ সালে জমিদাররা এ এলাকায় আসেন। জমিদার রূপরাম রায় প্রথমে নড়াইলের আলাদাতপুর তালুক ক্রয়ের মাধ্যমে জমিদারির গোড়া পত্তন করলেও এর প্রকৃত প্রসার ঘটে জমিদার কালী শংকর রায়ের আমলে। ইংরেজদের চিরস্থানী বন্দোবস্ত চালুর সময়ে তিনি নামে বেনামে রাণী ভবানীর তেলিহাটি, বিনোদপুর, রূপপাত, তরফ কালিয়া, তরফ দারিয়াপুরসহ বিভিন্ন তালুক ক্রয়ের মাধ্যমে জমিদারির বিস্তৃতি করেন।
বৃহৎ অট্টালিকা, ডজনখানেক দীঘি, পুকুর, নাট্যমঞ্চ, মন্দির, ফলের বাগানসহ এক বিশাল রাজবাড়ী নির্মাণ করেন। কালী শংকর রায়ের পর তার দুই ছেলে রাম নারায়ণ নড়াইলের জমিদার এবং জয় নারায়ণ নড়াইলের হাটবাড়িয়ার জমিদার হিসেবে জমিদারি পরিচালনা করতে থাকেন। রাম নারায়ণের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে রাম রতন রায় জমিদারির হাল ধরেন। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, জানা যায়, নড়াইল শহরের কুড়িগ্রাম এলাকায় নড়াইল-লক্ষ্মীপাশা-নওয়াপাড়া সড়কের পাশে চিত্রা নদীর পাড়ে ১৮৫৩ সালে নির্মাণ করা হয় বাঁধাঘাটটি। জমিদার বাড়ির গৃহবধূদের স্নান করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল এ বাঁধাঘাটটি। চুন সুরকির প্রলেপ আর রেলের স্লিপার দিয়ে বাঁধাঘাটটি তৈরি করা হয়েছিল। ২১টি সিড়ি বেয়ে চিত্রা নদীর দিকে নামিয়ে দেওয়া হয় ঘাটটি।
দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না হওয়ায় ভেঙে পড়ে সিড়িগুলো। বর্তমানে ১৫টি সিড়ি অক্ষত রয়েছে। প্রতি দিনই বিভিন্নস্থান থেকে অনেক মানুষ নড়াইল জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যবাহী এ বাঁধাঘাট দেখতে আসেন। বাঁধাঘাটের পাশেই রয়েছে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ। শহরে কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় ঈদসহ বিভিন্ন বিশেষ দিনগুলোতে বাঁধাঘাটটি দর্শনার্থীদের আড্ডার স্থলে পরিণত হয়।
দেশ বিভাগের পর জমিদাররা ভারতে চলে যান। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত দুই একজন আসলেও তার পর আর কেউ আসেনি। ১৯৬৫ সালে জমিদারি প্রথার বিলুপ্ত ঘটে। নড়াইলের বেশ কয়েকজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি নিজেদের উদ্যোগে বাঁধাঘাটটি সংস্কার করে নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করে।
নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র হিমেল কুন্ডু বলেন, কলেজের ক্লাস যখন থাকে না তখন বন্ধুরা মিলে বাঁধাঘাটে এসে আড্ডা দেন। চিত্রা নদীর কারণে এ স্থানটিতে মনোরম অনেক সুন্দর পরিবেশ থাকে সব সময়। আমাদের খুব ভাল লাগে।
কলেজছাত্র তিতাস ও দিগন্ত বলেন, প্রচণ্ড গরমেও বাঁধাঘাটের আবাহওয়া সব সময় ঠান্ডা থাকে। আমাদের এখানে কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। তাই অবসরে এখানে এসে সময় কাটাতে অনেক ভালো লাগে। এখানে প্রায় আসা হয়। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেই, ছবি তুলি। বাঁধাঘাটের পরিবেশটা অনেক সুন্দর।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক আশফাকুল হক চৌধুরী, এ প্রতিবেদক উজ্জ্বল রায়কে বলেন, নড়াইল জেলাটি বৈশিষ্ট্য মন্ডিত আছে ক্রীড়া সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য। পাশাপাশি নড়াইলের ঐতিহ্য আরো বেগবান হয়েছে এখানে জমিদারদের কিছু স্মৃতি রেখে যাওয়ায়। নড়াইলে যারা বৃটিশ আমলের জমিদার ছিলেন, ওনাদেরই রেখে যাওয়া স্মৃতি বাঁধাঘাট। এখন নড়াইলে যারা আসেন তাদের জন্য এটি দর্শনীয় স্থান।
তিনি আরও বলেন, জমিদারদের রেখে যাওয়া বৃস্তিত সম্পত্তি ছিলো সেগুলা অবৈধভাবে দখল করা হয়। পরে জেলা প্রশাসন সেগুলা উচ্ছেদ করে। যেখানে বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থী আসেন এবং এটি উপভোগ করেন। পাশাপাশি চিত্রার পাড়ে যে বাঁধাঘাট রয়েছে জমিদারদের আমলে যেটি তৈরি করা হয়েছিল সেটি বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংস্কার করা হয়েছে।