মো: জাকারিয়া, গাজীপুর: টঙ্গী পৌরসভা থেকে সিটিকরপোরেশন হলেও বিনোদনের জায়গা না থাকায় রেললাইনেই বিনোদন করছেন অধিবাসীরা। সরেজমিন শনিবার (৯ ডিসেম্বর) টঙ্গীর বনমালা রোডে রেললাইন সেতুতে বিনোদনের নিয়মিত দৃশ্য এখন নিত্যদিনের।
জানা যায়, গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের ৫৭ টি ওয়ার্ডের মধ্যে টঙ্গীতে ১৫ টি ওয়ার্ড। শিল্পনগরী টঙ্গীতে কাজের প্রয়োজনে লাখ লাখ মানুষ বসবাস করেন। টঙ্গীতে কর্মরত মানুষের পাশাপাশি ঢাকার সীমানায় অবস্থান হওয়ার কারণে রাজধানী ঢাকা সাভার আশুলিয়া সহ আশপাশের অনেক এলাকার কর্মরত হাজারো মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় টঙ্গীতে বসবাস করেন। ফলে টঙ্গীতে বসবাস করা স্বাভাবিক অধিবাসীদের চেয়ে অনেক বেশী জনসংখ্যা এখন টঙ্গীতে। এই সব কারণে টঙ্গীর বিশাল জনগোষ্ঠী অবসর সময়ে বিনোদনের জন্য তেমন কোন জায়গা পাননি। টঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ে টঙ্গী নৌবন্দরে ইকো পার্ক থাকলেও নিরাপত্তার অভাবে ও কিশোর গ্যাং এর অত্যাচারে বিনোদন বিমূখ মানুষ। ফলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে টঙ্গীর মানুষ বিনোদনের জন্য এদিক ওদিক ছোটাছুটি করেন। যেখানে একটু প্রকৃতির ছুঁয়া পাওয়া ফাঁকা জায়গা পায়, মানুষ সেখানেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
টঙ্গীর বনমালা দত্তপাড়া সহ বিরাট এলাকায় নেই কোন বিনোদনের জায়গা। নিকটবর্তী বনমালা রেলসেতু চারিদিকে খোলামেলা হওয়ায় মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তুরাগ নদীর একটি শাখা বনমালা খাল বা অনেকে হায়দরাবাদ খাল বলেই ডাকে। এই খালের উপর একটি রেলসেতু ও একটি সড়ক সেতু রয়েছে । রেল ও সড়কের দুটি সেতু পাশাপাশি হওয়ায় এবং সেতুতে লাল রঙ থাকায় এই জায়গা লাল সেতু হিসেবে পরিচিত।
সম্প্রতি গাজীপুর সিটিকরপোরেশন গাজীপুর সদরকে টঙ্গীর সাথে সরাসরি যুক্ত করতে বনমালা সড়ক নির্মান করা হয়। এই সড়ক নির্মাণের ফলে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী আসা-যাওয়ার মূলসড়ক ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট দেখা দিলে অনেক যানবাহন বিকল্প হিসেবে বনমালা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার টার্নিং পয়েন্ট হওয়ায় বনমালা লাল সেতু এলাকা স্থানীয়ভাবে বিনোদনের স্পট হয়ে গেছে। রেলসেতুর দুই দিকে বিল ও দুই দিকে রাস্তা হওয়ায় বনমালায় প্রকৃতিঘেরা লালসেতু এলাকায় গড়ে উঠেছে অনেক ভাসমান খাবারের দোকান। ফুসকা চটপটি এমনকি কয়েকটি স্থায়ী রেস্টুরেন্টে চাইনিজও পাওয়া যায় এখানে। সব মিলিয়ে টঙ্গীর বনমালা লালসেতু স্থানীয়ভাবে একটি পর্যটন পয়েন্ট। তবে বিনোদন করতে আসা মানুষ রেললাইনে বসে বিলের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে গিয়ে মাঝে মাঝে দৌড়ে রেললাইনও ছাড়তে হয়। ট্রেন দেখলেই রেললাইন ছাড়ার কারণে সাধারণ ভাবেই অহরহ ঝুঁকিতে পড়তে হয় আগন্তুকদের।
টঙ্গীর বনমালা লাল সেতু এলাকায় বিনোদন করতে আসা দত্তপাড়া এলাকার এক দম্পতি সন্তান সহ ঘুরতে এসেছেন। একটি সরকারী চাকুরীতে কর্মরত আলী হোসেন বলেন, তাদের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। তিনি দশ বছর ধরে দত্তপাড়ায় বসবাস করছেন। বনমালা সড়ক হওয়ায় লাল সেতু বিনোদন কেন্দ্র হয়ে গেছে। ছুটির দিনে তিনি প্রায়ই এখানে ঘুরতে আসেন।
ভাসমান পান- সিগারেট বিক্রেতা কিশোর সিয়াম বলেন, বেচা- কেনা ভালো হয়। তবে ট্রেন আসলে রেললাইন থেকে দৌড় দিতে হয়।
রেলসেতু সংলগ্ন সড়কের স্থায়ী দোকানদার ইসমাইল হোসেন জানান, মাঝেমধ্যে ট্রেনে কাটা পড়ে লোকও মারা যায় এখানে। বেশীর ভাগ লোক রেললাইনে মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে।
টঙ্গী রেলওয়ে জংশনের ইনচার্জ ( এসআই) ছোটন শর্মা বলেন, এখানে ট্রেনে কাটা পড়ে লোক মারা যায়। সঠিক সংখ্যা ঢাকা জিআরপি থানায় পাওয়া যাবে।
গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুনের উপদেষ্টা ও তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আমি মেয়র থাকা অবস্থায় বনমালা সড়ক নির্মান করেছি। বনমালা সড়ক আমার ও গাজীপুরবাসীর স্বপ্নের সড়ক। আমাকে ষড়যন্ত্র করে শেষ দুই বছরের মেয়র পদ কেড়ে নেয়ার কারণে বনমালায় বিনোদন পার্ক করতে পারিনি। এখন নগরবাসী আমাকে বিশ্বাস করে আমার মাকে ভোট দিয়ে মেয়র বানিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ এখন গাজীপুর মহানগরের সকল সমস্যা সমাধান করা হবে।