শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হোক জাতীয় সংসদ নির্বাচন

Slider বাধ ভাঙ্গা মত


।। মোল্লা তানিয়া ইসলাম তমা ।।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে । নির্বাচন নিয়ে সারা দেশে নানা ঘটনার জন্ম হওয়ায় এবারের নির্বাচন বহুল আলোচিত । দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি । এতে নির্বাচন হয়ে উঠেছে আরও অর্থবহ এমন মত বিশ্লেষকদের । সংগত কারণে এবারের নির্বাচন ভিন্ন । পুলিশ সদর দফতরসহ বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতালে ৪শটির মতো অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে এবং ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে । ভয়, শঙ্কা আর সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই দ্বাদশ নির্বাচন হতে যাচ্ছে । সামনের দিনগুলোতে কোনোভাবেই যেন পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠতে না পারে সে জন্য পুরো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা দরকার । নির্বাচনের আগে বেশ কিছু সন্ত্রাসীগোষ্ঠী বিভিন্ন জায়গায় ভাড়াটিয়া হিসেবে কাজ করে । শুরুতেই তাদের রুখতে হবে, না হলে বড় ধরনের যেকোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকগন । এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে। প্রশাসন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে কোনো ধরনের অঘটন আগামী দিনে ঘটতে পারবে না বলে বিশ্বাস করা যায় । একটি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য বারবার সংবিধান সংশোধন করার কোনো অর্থই কেউ যুক্তির ওপর দাঁড় করাতে পারবে না, যতই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের উদাহরণ টানা হোক না কেন। সেসব নিয়ে অর্থহীন বিতর্ক করা যাবে, কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচন প- করার আন্দোলনের দায় কাদের? ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও যে বিতর্ক রয়েছে, তাতে বিরোধীদের ছিল শৈথিল্য, নেতৃত্বের অভাব আর সরকারি দলের প্রার্থীদের ছিল বাড়াবাড়ি। এ ছাড়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি একদিকে যেমন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি দেওয়ার প্রমাণ ও অভিজ্ঞতা দিতে পারেনি; অন্যদিকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই ব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করার পর সেই ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন সংবিধানে কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত থাকলে সর্বোচ্চ আদালত থেকেই তা নিষ্পত্তি করতে হয়। সংবিধানে যেহেতু সেই রায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে, তাই নতুন করে সেই ব্যবস্থার প্রয়োগ করতে গেলে তা সাংঘর্ষিকতার কারণে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না । এসব বিষয়ে বিএনপির নেতারা জেনেও কেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্ব না দিয়ে সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আন্দোলন করতে গেলেন, তা-ই বোধগম্য নয় । কারণ এ ধরনের আন্দোলন করে যদি দেশে কোনো ঐক্যবদ্ধ গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করা না যায়, তাহলে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয় । বিএনপি ২৮ অক্টোবরের আগে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলেও তাদের দাবিনামা ছিল বারোয়ারি অর্থাৎ বেশ কিছু জটিল দাবি; যেগুলো সরকার, সংবিধান এবং সব বিষয়ে সমঝোতার ওপর নির্ভরশীল। তবে এই দাবিগুলো নিয়ে সংসদ এবং বাইরে আলোচনা করা যেত। একমত হলে সংবিধান সংশোধন করা যেত। যেমনটি ১৯৯১ সালে করা গিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তা না করে ২৮ অক্টোবর ‘মহাযাত্রার’ নামে সরকার উৎখাতের যেসব আলামত দেখিয়েছিল, এর পরেই পরিস্থিতি বিএনপির হাত থেকে চলে যায় । সরকার আইনানুগভাবেই অগ্রসর হয় । নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনের বারোয়ারি কর্মসূচি দিয়ে জনসমর্থন হারাতে বসেছে । অথচ নির্বাচনে গিয়ে দলটি অনেক কিছুই অর্জন করতে পারত । নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে জনসমর্থন নিয়ে আন্দোলন করতে পারত । এখন বিএনপি যে স্বপ্ন দেখছে তার কতটা ধরা দেবে, সেটি মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন । এবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ৩২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল । বিএনপিসহ তার শরিক জামায়াত ব্যতীত নিবন্ধিত অধিকাংশ সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে । স্বাভাবিকভাবেই আশা করা যেতে পারে, উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন । তার আমেজ শুরু হয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে । মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর । রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর । নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত । আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি । বিএনপি তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় তাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ ক্ষীণ হয়ে এসেছে । এক্ষেত্রে ইসি বলেছিল, বিএনপি নির্বাচনে এলে ভোটের তারিখ ঠিক রেখে তফসিল পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে । এদিকে সরগরম হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ । অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো এখন জনসংযোগে ব্যস্ত । সামনে তা আরও বাড়বে । মানুষের মধ্যে সর্বত্র শুরু হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ । দেশের মানুষ আশা করছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান । সেই হাওয়া এখন বইছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে-এটাই আমাদের কাম্য। নির্বাচন ঘিরে কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ যাতে নতুন করে ঘটতে না পারে সে জন্য তালিকা ধরে কাজ কারতে হবে । তথ্য বলছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল । ভোটগ্রহণের অনুষ্ঠানে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে এসে বা প্রার্থী ও দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি তিনি যে দলের বা মতেরই হন মৃত্যুর মতো ঘটনা কিছুতেই কাম্য নয় । পত্রিকান্তরে, জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংঘর্ষ, ভোট বর্জন, সন্ত্রাসী হামলায় আহত এবং ১৭ জনের মৃত্যু হয়। একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়। আরও একটি বিষয় খুবই উদ্বেগজনক, সেটা হচ্ছে কোন প্রার্থী কোথায় ভোট দেবেন, তা জেনে পরে তাকে আক্রমণ করে এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার । তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসব দুঃখজনক ঘটনা যেন আর না ঘটতে পারে। এ বিষয়ে নির্বাচনে থাকা দায়িত্বশীলদের আরও সতর্ক হবে, আমাদের প্রত্যাশা । এবারের দ্বাদশ নির্বাচন ঘিরে যাতে অতীতের কোনো নেতিবাচক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে নিশ্চিয়তা দেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচনে দায়িত্বশীলদের । পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব ভুলে যেতে পারে না । দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ । এখন এ নির্বাচনকে অর্থবহ করে তোলার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সবার। অতীতে নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা ভয়াবহতার শিকার হয়েছেন ভোটাররা। এবারাও নির্বাচনে ভোটারদের মাঝে কিছুটা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা রয়েছে । তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিবেশ ঠিক রাখার কোনো বিকল্প নেই । প্রার্থী ও তাদের কর্মী- সমর্থকরা প্রচার চালাবে । সাধারণ ভোটাররা যাতে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন সে নিরাপত্তাও নিশ্চিত করাই পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্ব । এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার প্রশাসন ও পুলিশের আছে । আমরা মনে করি, রাজনীতি যেহেতু মানুষের কল্যাণেই, সেহেতু ভোটারদের শঙ্কা দূর করারও দায়িত্বও রাজনৈতিক দলগুলো অস্বীকার করতে পারে না । সর্বোপরি বলতে চাই-অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই ভোটারদের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে । এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার ভূমিকা অনীস্বকার্য । প্রত্যাশা থাকবে, নির্বাচন হোক প্রশ্নমুক্ত । এগিয়ে যাক দেশ ও দেশের গণতন্ত্র । রাজনৈতিক সহিংসতার অবসান হোক চিরতরে । সংঘাত-সহিংসতামুক্ত সুন্দর পরিবেশে নির্বিঘেœ হোক ভোট উৎসব-এটাই আমাদের প্রত্যাশা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *