আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর নৌকা প্রতীক পেয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এতে একদিকে যেমন তার সঙ্গে নেই কোনো স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে তার যোগদান নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাত সাড়ে আটটায় রাজাপুর বাঘরি এলাকায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে শাহজাহান ওমরকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন দীর্ঘ দিনের ওস্তাদের (এলাকায় শাহজাহান ওমরকে সবাই ওস্তাদ বলে ডাকে) শিষ্য উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নাসিম আকন। তিনি বলেন, আমরা তাকে অনেক বুঝিয়েছি, তিনি আমাদের কথা শোনেননি। তাই আমরা তার সঙ্গে নেই, যতদিন বেঁচে থাকবো বিএনপির সঙ্গেই থাকবো।
নাসিম আকন আরও বলেন, শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজাপুরে তার বাসভবনের কেয়ারটেকার ইদ্রিস বাইপাস মোড়ে বিএনপি অফিস থেকে সাইনবোর্ড খুলে ফেলেছে এবং আসবাবপত্র ফেলে দিয়েছে। আমি একদিন সময় চেয়েছিলাম আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু কোনো সময় দেওয়া হয়নি। এখন এই অফিসে নৌকা প্রতীকের কার্যক্রম চালানো হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে জোট সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে শাহজাহান ওমর নিজের কিছু জমি ও সড়কের পাশে রাস্তা ও মহাসড়কের কিছু জমির ওপর বিশাল আকৃতির দোতলা ভবন তৈরি করে বিএনপি অফিস নির্মাণ করেন। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা চলাকালে সেনাবাহিনী সরকারি জমির ওপর তৈরি করা অংশ ভেঙ্গে ফেলতে চাইলেও কোনো শ্রমিক ওমর সাহেবের ভবন ভাঙার কাজে রাজি হয়নি।
রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এএইচএম খায়রুল আলম সরফরাজ বলেন, আমাদের আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়া বজলুল হক হারুন এমপির সঙ্গে আমরা ছিলাম না। আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তারপরও যদি আনুষ্ঠানিক প্রতীক বরাদ্দের পর কেন্দ্র থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয় তাহলে আমরা দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেব। কিন্তু আমরা হারুনের পক্ষে নির্বাচন করবো না। তবে শাহজাহান ওমর আমাদের সঙ্গে কথা বলে যোগ দিলে ভালো হতো। তিনিও আমাদের কিছু বলেননি, দলও আমাদের কিছু জানায়নি।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ গত রোববার সারা দেশে দল মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। তখন ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে হঠাৎ বিএনপি কেন্দ্রীয় সহসভাপতি পাঁচবারের সাবেক এমপি ওমরের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার খবর বিস্ময় তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে।
শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা নিয়ে ঝালকাঠি-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য এম মনিরুজ্জামান মনির বলেন, শাহজাহান ওমরকে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা মেনে নেবেন না। তিনি রাজাপুর বিএনপি অফিসকে আওয়ামী লীগ অফিস বানানোর চেষ্টা করছেন।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় ৪ নভেম্বর রাতে শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন ঢাকার নিউমার্কেট থানার বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় তাকে। প্রায় চার সপ্তাহ কারাবন্দি থাকার পর গত বুধবার দুপুরে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান শাহজাহান ওমর। সন্ধ্যার পরই কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়া বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউটিসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা জানান শাহজাহান ওমর। তিনি বলেন, ঝালকাঠি–১ আসনে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নৌকার প্রার্থী হিসেবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনি। এরপর তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।