গোটা দেশকে জিম্মি করেছে মাফিয়াচক্র : রিজভী

Slider রাজনীতি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই জনগণের সমস্ত মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার আজ কেড়ে নেয়া হয়েছে। কেবল জনগণই নয়, গোটা দেশকে জিম্মি করেছে মাফিয়াচক্র।’

শনিবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে জনগণ তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভার পরবর্তী মেয়াদের জন্য কাদের হাতে অর্পণ করতে চায় তা সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের আলোকে নির্ধারণ করে দেয়। সেই নির্বাচনকে এখন হাসি-তামাশা, বাণিজ্য ও প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিত্ব এখন দান-দক্ষিণা, খয়রাত, বিলি-বণ্টন, ভাগ-বাটোয়ারা, উপহার-করুণায় পরিণত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ বিনা ভোটে অটোপাসের নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নীশিরাতের ভোট ডাকাতির পর এবার ইলেকশন ভাঁওতাবাজীর নামে সিলেকশন করা হচ্ছে। ৭ জানুয়ারি ভোটের নামে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা হবে অত্যন্ত নিখুঁত ধূর্ততায়, জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে। ইলেকশনের দিন রাতে পাঠ করা হবে গণভবনের তালিকা।’

রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন এলে যে আনন্দ-উৎসবের জোয়ার নামে জনপদগুলোতে তার পরিবর্তে ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে সারাদেশে। যারা আওয়ামী লীগ করে তারা ছাড়া বাকিরা গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বহু গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। নির্বাচনকে উৎসবের বদলে ভয়, আতঙ্ক ও শোকে পরিণত করেছে ক্ষমতাসীনরা। মনোনয়ন নিয়ে ইতোমধ্যে খুনোখুনি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘স্বৈরতন্ত্রের ক্রমাগত বিকাশ ঘটিয়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য গোপন-প্রকাশ্য বহু বাহিনী তৈরি করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে টার্গেট করে করে অর্থ ও এমপি বানানোর প্রলোভনে কিংস পার্টি, ভূঁইফোড় পার্টিতে রাজনৈতিক নেতাদের ঢুকানো হচ্ছে। তবে কোনো নীতিবান, আদর্শবাদী, দেশপ্রেমী রাজনীতিককে তারা নিতে পারছে না। কতিপয় ডিগবাজীমার্কা, ভ্রষ্টচারী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নির্বাচনী রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা বানাতে কব্জা করেছে। টাকার বিনিময়ে খরিদ হওয়া এসব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ এখনই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। কারণ তারা টাকা ও ক্ষমতার মুলোর লোভে পড়ে ডিগবাজী দেয়ার পর এখন বুঝতে পারছেন তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে না।’

তিনি বলেন, ‘জোড়াতালী দিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটছে মাফিয়াচক্র। তবে তুমুল আন্দোলনে-জনজোয়ারে এই নির্বাচনী নাটক ভন্ডুল হয়ে যাবে। জনগণ আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন দিবস উদযাপিত করবে ইনশাআল্লাহ।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘ফ্যাসিস্টদের কাছে যারা ছুটোছুটি করছেন তাদের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আমার আহ্বান- অবৈধ ক্ষমতার দাপটের চেয়ে জনগণের ভালোবাসায় ধন্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানের। অতএব, নিজেদেরকে অসম্মানিত করবেন না। ১২ কোটি ভোটারের লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার আদায়ের দাবির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। ফ্যাসিস্ট সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট আর দুঃশাসনে বিপর্যস্ত দেশের প্রতিটি কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর চাওয়া-পাওয়ার সাথে বেঈমানি করবেন না। যারা বর্তমানে সাময়িক লোভ-লাভের আশায় ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের আন্দোলনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন তাদের নামও রাষ্ট্রীয়ভাবে বেঈমানদের তালিকায় চিহ্নিত থাকবে।’

রিজভী বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অধিকাংশ জনগণের দিন কাটছে অভাবে-অর্ধাহারে-অনাহারে। এমনকি অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও সংসারের টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক পরিবার। প্রতিদিন বেড়েই চলেছে চাল, ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। দেশে উৎপাদনশীল এসব পণ্যের সাথে অন্য কোনো দেশের যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে কেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? এর কারণ, বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে জনগণ নয়, এ ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রয়োজন মাফিয়া চক্র। ফলে মাফিয়া চক্রকে খুশি রাখতে গিয়ে সরকার জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে। তাই এই সরকারকে যত দ্রুত ভূলুণ্ঠিত করবেন তত দ্রুত জনগণের মুক্তি মিলবে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘একতরফা নির্বাচন করতে বর্তমানে দেশব্যাপী আবারো পুলিশের পাশাপাশি আদালতকে করা হয়েছে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে স্বৈরশাসকের পৈশাচিক প্রবৃত্তির লীলাকেন্দ্র। এই প্রতারক মাফিয়া সরকার একদিকে বলছে নির্বাচনে আসুন অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীসহ আন্দোলনে সক্রিয় ও সাহসী নেতাদের টার্গেট করে বেছে বেছে তাদেরই কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে। পুরনো মামলায় সাজা দেয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে দুই বছরের নিচে কারোর সাজা হচ্ছে না। কারণ দুই বছরের সাজা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রতিবন্ধক।’

‘মৃত, গুম হওয়া নেতাদেরও দেয়া হচ্ছে সাজা। গত দেড় মাসে বিএনপির ৫৮২ জন নেতাকর্মীকে প্রহসনের বিচারে দণ্ডিত ঘোষণা করা হয়েছে। আসামিদের অনুপস্থিতিতে চার্জ গ্রহণ ও কারাগারে বন্দী অবস্থায় আসামিকে সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা শোনার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে দণ্ড ঘোষণা করা হচ্ছে,’ বলেন রিজভী।

রিজভী বলেন, ‘সব মামলার বাদি পুলিশ। তারাই সাক্ষী। ফরমায়েশি রায়ও দেয়া হচ্ছে প্রহসনের নির্বাচনের মতো।’

তিনি বলেন, ‘বিরোধী নেতাদের আটক করা এবং তাদের সাজা দেয়া স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শাসকদের পুরনো প্র্যাকটিস। জোর করে অনেক কিছু করতে চায় তারা। কিন্তু স্বৈরাচারীদের আখেরে কোনো লাভ হয় না। এ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেশের জনগণ সর্বান্তকরণে অঙ্গিকারবদ্ধ। পতনই তাদের করুণ ভবিতব্য। এক দফার আন্দোলন আরো বিস্তৃত, বেগবান ও তেজোদীপ্ত হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *