কঠিন চ্যালেঞ্জে আ’লীগ আন্দোলন মোকাবেলা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন

Slider রাজনীতি


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একেবারে দরজায় কড়া নাড়ছে। তফসিল ঘোষণারও তোড়জোড় চলছে নির্বাচন কমিশনে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মূলত কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রথমত, সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্রদের এক দফার চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন মাঠে গড়িয়েছে। বিএনপি বলছে, নির্দলীয় সরকার ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। দ্বিতীয়ত, অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপ রয়েছে। বিশেষ করে প্রভাবশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এদেশের আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে। বিএনপি জোটের আন্দোলনের পাশাপাশি এবার আন্তর্জাতিক মহলের বাড়তি চাপ মোকাবেলা করেই আগামী নির্বাচন আয়োজন করতে হবে দলটিকে, যা আওয়ামী লীগ ও সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগ কঠিন সময় পার করছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একেবারে কাছাকাছি। কিছু দিন পর তফসিল ঘোষণা হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলের অনেক চাপ আছে। সরকারের বিরুদ্ধেও নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আবার বিএনপিও নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি মনে করেন, অতীতের মতো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব ষড়যন্ত্র ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারো জয়ী হবে এবং এদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সামনে এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য করা। নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বছরের প্রথম দিকে প্রথমে ভিসানীতি ঘোষণা করে এবং এর কয়েক মাস পর তা কার্যকর করার ঘোষণা দেয়ায় সব মহলে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তারা এ নিয়ে বেশ আতঙ্কে রয়েছেন। এ ধরনের আতঙ্ক ও উদ্বেগ আগে কখনো দেখা যায়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনে কোনো বাধা সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্টদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে আজ অবধি নিরবচ্ছিন্নভাবে শাসনভার আওয়ামী লীগের হাতেই রয়েছে। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্নের মুখে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশীয়-আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাপে থাকাবস্থায় সরকার গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনা করলেও সেই বিতর্ক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি শাসক দলটি। আগামী নির্বাচন সরকার ও দলের তরফ থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস দেয়ার পরও এদেশের ওপর ভিসানীতি ঘোষণা ও কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র আরো স্যাংশন দিতে পারে- রাজনৈতিক মহলে এমন আলোচনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির একাধিক নেতা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে ও পরে বিএনপি ও তার মিত্ররা আন্দোলন করে নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ভূমিকায় নির্বাচন বানচাল তারা করতে পারেনি। তাদের আন্দোলনও ব্যর্থ হয়। শুরুর দিকে সরকার বৈধতার সঙ্কটে পড়লেও দলটির কূটনৈতিক সফলতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে শেষমেশ আন্তর্জাতিক মহলের চাপ কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছিল। যদিও ওই সময় কোনো বাহিনীর ওপর বা বাহিনীর কোনো সদস্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন-ভিসানীতি কার্যকর ছিল না। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনের দিন তারা ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছিল। কিন্তু ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে। এরই মধ্যে বিএনপি কয়েকবার আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল কিন্তু তারা সফলতার মুখ দেখেনি। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল। ওই দিন সফল না হওয়ায় তারা এখন হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস একবার নির্বাচন কমিশন, আরেকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এভাবে সরকারের প্রভাবশালী নেতৃত্বের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৈঠক করছেন।

অবশ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত চাপ থাকা সত্ত্বেও সংশোধিত সংবিধানের আলোকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। তারা সভা-সমাবেশে বলছেন, দেশী-বিদেশী সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবেন। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি না এলেও নির্বাচন আয়োজনে তারা বদ্ধপরিকর। যদিও ঘরোয়া আলোচনায় বিএনপিবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেও সংশয় কাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোকে এড়িয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্বাচন করা এবার একেবারে কঠিন। যেখানে বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। তারা চায়- বিএনপির অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক- যদিও তারা সেটা সরাসরি বলছে না। তারপরও তাদের কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ড সেটাই বলছে। ফলে এবার বিএনপির অনুপস্থিতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনও অনেকটা কঠিন হতে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে কিছুটা দৃশ্যমান হবে। তবে তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি ও তার জোট সঙ্গীদের আন্দোলন কোন দিকে মোড় নেয় সেটাও এখন দেখার বিষয় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়। এই নীতিকে সামনে রেখে এরকম চ্যালেঞ্জ অতীতেও আওয়ামী লীগ মোকাবেলা করেছে। কিছু সময় লেগেছে কিন্তু আওয়ামী লীগ শেষমেশ সফলতা পেয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মহলের এই কঠিন চ্যালেঞ্জও এবার আওয়ামী লীগ ধৈর্যসহকারে মোকাবেলা করেই সফলতা পাবে। তিনি আরো বলেন, কিছুদিন পরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। আমরা জানি, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের মতো বিএনপি নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলা করে আমরা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। এজন্য আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *