শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন নিজেদেরকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালতে তারা নিজেদেরকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে বক্তব্য রাখেন।
তাদের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন আত্মপক্ষ সমর্থনে ২২ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করেন।
আত্মপক্ষ সমর্থন করে এ লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকসহ ৫০টির অধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। কোনো কোম্পানিতে তার নিজস্ব কোনো শেয়ার নেই। সুতরাং কোনো লভ্যাংশ বা লাভের টাকা ওনার পকেটে ঢোকে না। যখনই দেশের গরিবদের একটা সামাজিক সমস্যা দেখেছেন, সেটার মাধ্যমেই একটা বিজনেস মডেল বানিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষা সমস্যার জন্য বানিয়েছেন গ্রামীণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য বানিয়েছেন গ্রামীণ কল্যাণ। এমন ব্যবসার ধারণা বা মডেল তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় দেন কিন্তু মালিকানায় কখনো নিজেকে জড়াননি। দেশে-বিদেশে কোথাও নিজের নামে কোনো জায়গা জমি গাড়ি-বাড়ি নেই তার।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেখান। যিনি এতোগুলো ইম্প্যাক্ট তৈরি করেছেন।
এতগুলো বিদেশি ব্র্যান্ড কোম্পানিকে যৌথ-উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে এনেছেন। এত এত মানবসম্পদ তৈরি করেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা কোনো কিছুই তিনি নিজের কোনো আর্থিক লাভের জন্য করেননি। এ ধরনের অসংখ্য অবদান রাখার পরও এই নিঃস্বার্থ মানুষটিকে মিথ্যা অপরাধে দাঁড়াতে হচ্ছে বিচারের কাঠগড়ায়।
অতএব, বিনীত প্রার্থনা এই যে উপরোক্ত কারণাধীনে ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে এই মিথ্যা অভিযোগ থেকে আমরা আসামিদেরকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানাচ্ছি।’
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকম সম্পর্কে ভুল ও মিথ্যা তথ্যের অবতারণা করে টেলিকমের অবৈতনিক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসহ চারজন পরিচালক বিবাদীর বিরুদ্ধে শ্রম আইনের তিনটি ধারা ৪(৭)-(৮), ১১৭ এবং ২৩৪-এর বিধান সমূহের লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগ আনয়ন করিয়া বিএলএ (ফৌজদারী) মামলা নম্বর ২২৮/২০২১ দায়ের করে ৩০৩ (ঙ) ও ৩০৭ ধারায় শাস্তি দাবি করে। বিবাদীগণ ওই বিএলএ (ফৌজদারী) মামলা নম্বর ২২৮/২০২১-এ তাদের বিরুদ্ধে বাদির আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপূর্ণ দাবী করিয়া দৃড়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করিতেছি। তাই বাদীর দায়েরকৃত মামলা ক্ষতিপূরণসহ খারিজ করিবার জন্য আদালতে প্রার্থণা করছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ উহার নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হয়। কারণ গ্রামীণ টেলিকম যে সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে সেগুলো চুক্তি ভিত্তিক এবং নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে তা নবায়নের মাধ্যমে পরিচালনা করে। নোকিয়া কেয়ার এবং পল্লীফোন কার্যক্রম তিন বছরের চুক্তি অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং তিন বছর পর চুক্তি নবায়ন করে তা পরিচালনা করা হয়। যেহেতু গ্রামীণ টেলিকমের কার্যক্রম উপরোল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে সেজন্য গ্রামীণ টেলিকমের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবসায়িক চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির সাথে সাথে অনুরূপভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তির মেয়াদও বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকমের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে স্থায়ী কর্মীর মতোই প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুয়িটি, অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটিসহ সবই প্রদান করা হয়ে থাকে।