রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুরের কাওরাইদ গ্রামে রেললাইনের নিচে ফেলে হত্যার অভিযোগে দাফনের প্রায় ১৭ মাস পর এক ব্যক্তির মৃতদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল মামুনের উপস্থিতিতে লাশটি উত্তোলন করা হয়। পরে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত মো. তোফাজ্জল হোসেন (৩০) উপজেলার কাওরাইদ গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। তিনি কাওরাইদ ইউনিয়নের যুবলীগের সদস্য ছিলেন।
স্বজনদের অভিযোগ, অভিযুক্তরা হাত পা কেটে সুপরিকল্পিতভাবে চলন্ত ট্রেনের নিচে ফেলে তোফাজ্জল হোসেনকে হত্যার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে ১৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই যুবলীগ কর্মীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে অভিযুক্তদের নাম বলে যায় দাবি স্বজনদের।
অভিযুক্তরা হলেন, মো. রাকিব মিয়া (৩২), মো. মোকলেছ মিয়া (৩০), মো. হারুন (৩০), দেলোয়ার (৪০), মো. রুবেল (২৮), রাসেল (২৫) ও কামরুল আহসান গোলাম (৫০)।
নিহতের বড়ভাই মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘২০২২ সালের ৮ জুন রাত সাড়ে আটটার দিকে মামলার প্রধান আসামি রাকিব আমার ভাই তোফাজ্জল হোসেনেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেয়। এরপর রাত পৌনে একটার দিকে আমার ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা তাঁর স্ত্রী রিতা আক্তারের। এ সময় সে বাসায় আসতে দেরি হবে বলে ফোন কেটে দেয়’।
এরপর সারা রাত তিনি বাসায় আসেনি। ২০২২ সালের ৯ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মামলার অভিযুক্ত দেলোয়ারা স্থানীয়দের ডেকে বলে তোফাজ্জল রেললাইনের নিচে কাটা পড়ে মারা গেছে। এরপর তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর পরে ময়মনসিংহ ও ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২২ জুন তাঁর মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, ভাই মারা যাওয়ার আগে বলে যান, তিনি রেললাইনে কাটা পড়ে আহত হয়নি। তাকে ফোনে ডেকে নিয়ে দা দিয়ে ডানহাত কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে নির্যাতন চালিয়ে গুরুতর আহত করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রেললাইনের ওপর ফেলে যায়। ওই সময় তিনি রেললাইনের ওপর থেকে কিছুটা দূরে সরে আসতে পারেন।
অভিযুক্তদের সঙ্গে তোফাজ্জল হোসেনের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ঘটনার আগের শুক্রবার অভিযুক্ত দেলোয়ারের সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়। ওই দিনই তাঁর ভাইকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
নিহতের স্ত্রী রিতা আক্তার বলেন, ‘রাত পৌঁনে একটার দিকে আমি তোফাজ্জলকে ফোন করি। সে আমাকে বলে বাসায় আসব, তবে দেরি হবে। এ সময় আমি জানতে চায় কে আছে তোমার সঙ্গে, তখন প্রতি উত্তরে জানায় রাকিব আর মোকলেছ তার সঙ্গে রয়েছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শক (তদন্ত) রাফিকুল ইসলাম জামান,বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকাকে বলেন, গত বছর ৩০ এপ্রিল নিহতের বড়ভাই মোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে গাজীপুর আদালতে হত্যা মামলা করেন। এরপর বিজ্ঞ আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তের অংশ হিসেবে আদালতের নির্দেশনায় লাশ দাফনের প্রায় দেড় বছর পর মৃতদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল মামুন বলেন, আদালতের নির্দেশনায় দাফনের প্রায় দেড় বছর পর কবর থেকে মৃতদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য স্থানীয় ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলেন।