জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের কথা তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন বলেছ- মুখোশপরা হেলমেটধারীরা সরকারের লোক।’ এইভাবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের সংস্থা সরকারের পরিকল্পিত আক্রমণ সম্পর্কে এখন ওয়াকিবহাল।
বুধবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম ও সহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।
রিজভী বলেন, গতকালের প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে প্রমাণিত হলো- তিনি নানা ধরনের ফন্দি করে আবারো ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করতে চান। তিনি রাজনৈতিক সমঝোতা ও সম্প্রীতি এবং অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠনির্বাচনে বিশ্বাসী নন। তাই অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের কথা শুনলেই প্রধানমন্ত্রী মনে করেন- তার জমিদারীতে কেউ অনধিকার প্রবেশের চেষ্টা করছে। তাই অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য কেউ দাবি করলেই তিনি ক্ষুদ্ধ ও বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন। অন্যান্য দাবীসহ অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের একদফা দাবিতে ২৮ অক্টোবরের বিএনপির সাগরসম মানুষের উপস্থিতিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালো চোখে দেখেননি। এতো মানুষের সমাগম দেখে তার অন্তরজ্বালা বাড়তে থাকে। এইজন্য তিনি তার বাছাইকরা আইনশৃংখলা বাহিনীকে দিয়ে গুলি, টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সাংবাদিকসহ বিএনপি নেতাদের হত্যাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করান। বিএনপির সমাবেশকে পণ্ড করায় আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই কারণেই আইন শৃংখলা বাহিনী আরো বেশি বেপরোয়া ও নারকীয় তাণ্ডবে লিপ্ত হয়েছে। তারা মরণঘাতি অভিযানে আরো বেশী হিংস্র হয়ে উঠেছে। ২৮, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচিতে ঢাকাসহ সারাদেশে তারা হত্যার প্রতিযোগীতায় মেতে উঠে। গতকালকের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিবেকহীন পুলিশ বাহিনী বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাতে আরো বেশি উৎসাহী হয়ে উঠে।
তিনি বলেন, ২৮, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর আওয়ামী পুলিশ রক্তের যে হোলিখেলা খেলেছে, সেটি নজিরবিহীন পৈশাচিক ঘটনা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী অনর্গল মিথ্যা কথা বলেছেন সারা জাতির সামনে। অথচ দেশবাসী এবং আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় যা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে সেটাকে পরিবর্তন করবেন কিভাবে? জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন বলেছে যে- মুখোশপরা হেলমেটধারী ব্যক্তিরা সরকারের লোক। এইভাবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের সংস্থা সরকারের পরিকল্পিত আক্রমণ সম্পর্কে এখন ওয়াকিবহাল। আওয়ামী লীগ শুধু বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের আক্রমণ ও জখম করে হতাহত করছে না, খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকেও রক্তাক্ত পন্থায় দমন করছে।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাক্ষুধা এতটাই তীব্র যে তারা সারাদেশকে গোরস্তান বানিয়ে ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়। আওয়ামী লীগের ’টপ টু বটম’ নেতাকর্মীদের ভাষা একগুয়েমী গুণ্ডা-সন্ত্রাসীদের মতো। এদের কাছে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধ, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের কোনো মূল্য নেই। এরা অবৈধ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রভু হয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। সেই কারণেই বিরোধীদলের আওয়াজকে নিস্তব্ধ করার জন্য নিজেদের মনের মতো করে আইনশৃংখলা বাহিনীকে সাজিয়েছে। আর তারই প্রতিফলন বিএনপিসহ বিরোধীদলের কর্মসূচিতে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত লাঠিয়ালের মতো তাদের আক্রমণ।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে তিনি ’ডান্ডালীগ’ গড়ে তুলেছেন। আইনশৃংখলা বাহিনী ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ একযোগে ’ডান্ডালীগ’ হিসেবে কাজ করছে। এরাই সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক ঠুকছে। বিরোধী দলকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেড় দশকের আওয়ামী লুণ্ঠন ও অর্থপাচারের কাহিনীগুলো যেন সাধারন জনগণ জানতে না পারে। পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলের এক্রিবিশনে মানুষের পেট ভরছে না। বিপুল জনগোষ্ঠী অনাহারে অর্ধাহারে কোনোরকমে বেঁচে আছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এতটাই বেড়েছে সেটা আমাদের গ্যালাক্সি ছাড়িয়েও আরো ঊর্ধগামী হয়েছে। আলুর কেজি ৭০-৮০ টাকা। অথচ সরকার দাম নির্ধারিত মূল্য ছিল ৩৫ টাকা। পিঁয়াজের বর্তমান মূল্য কেজি প্রতি ১৪০ টাকা। সাতদিন আগে ছিল ১০০ টাকা। আর সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৬৫ টাকা। এইভাবে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সারা জাতি হতবম্ভ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ। মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ তার উপার্জিত পয়সা দিয়ে খাবার কিনতে পারছে না। একবেলা খাবার জোগোনোই অসম্ভব হয়ে গেছে। অসাধু পণ্য সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সরকার। কারণ এই সিন্ডিকেটবাজরা সবাই আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জেলখানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দুর্দশা এখন চরমে উঠেছে। বিএনপির যে সমস্ত নেতা যারা একসময় মন্ত্রী -এমপি ছিলেন তাদেরকেও ডিভিশন দেয়া হচ্ছে না। কারাগারের ভেতরে বিএনপি নেতাদের আটকে রাখা হচ্ছে। এমনকি দিনের বেলায়ও তাদের সেলের ভেতরে আটক রাখা হয়। ভয়ংকর হয়রানির মধ্যে বিএনপি নেতারা দিন কাটাচ্ছেন। সকল মামলায় জামিন পাওয়ার পরেও জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেফতার এখন বিএনপি নেতাকমীদের ভাগ্যের লিখন হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার জুলুমের মাত্রার কোনো শেষ নেই। গতকাল জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতারের পর আজকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এটা সরাসরি মির্জা আব্বাসের ওপর সরকারি নিপীড়ন। কারাগারে অসুস্থ বিএনপি নেতাদের হাসপাতালের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমি কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর কারাকর্তৃপক্ষের নিপীড়ন ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ সময় তিনি সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরেন। কিশোরগঞ্জ জেলাধীন ভৈরব পৌর শাখার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মোঃ আশিক মিয়া গতকাল পুলিশের টিয়ারশের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে ভাগলপুরস্থ জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাত ১০টার সময় মৃত্যুবরণ করেন।