গত ২৮ অক্টোবর থেকে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ড সরকারের মাস্টার প্ল্যান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
এসময় তিনি বলেন, ‘বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অস্ত্রসজ্জিত পুলিশ যে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে, এটি সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ও সহ-অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।
রিজভী বলেন, ‘বিরোধী দলের সমালোচনায় ভাষা প্রয়োগ করা মানেই ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে তাই বন্দুকের নল তাক করা থাকে। অংশগ্রহণকারীদের ভাগ্যে থাকে আটক বা কারাবরণের জুলুম। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আক্রমণ দেখে নাৎসি জার্মানির গেস্টটাপোরাই চমকে উঠবে। বিস্তৃত পরিসর জুড়ে দেশবাসী মানুষের মিছিল প্রত্যক্ষ করেছে এক মহাসমুদ্র। এই দৃশ্য সহ্য করতে পারেনি সরকার। তাদের পেটোয়া বাহিনীগুলো সমাবেশের মানুষদের লক্ষ্য করে খই ফোটানোর মতো বন্দুকের গুলি ছুড়তে থাকে। নিহত, আহত আর গ্রেফতারের নির্বিচারে জুলুমের নারকীয় দৃশ্যের সূচনা হয়। রক্তরঞ্জিত করা হয় সমগ্র সমাবেশকে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার পতনের এক দফা দাবি মহাসমাবেশে হামলা ও দলের মহাসচিবকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের আজ প্রথম দিন। শান্তিপূর্ণ এই অবরোধ কর্মসূচিতে উন্মত্ত হায়েনার মতো হামলা চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশ কর্তৃক কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ ও কৃষকদল নেতা বিল্লাল মিয়া এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার যুবদল নেতা দিলু আহমেদ জিলুকে গাড়িচাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আসলে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন সরকারপ্রধান। সুষ্ঠু নির্বাচন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, স্বচ্ছ ভোট, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি শব্দগুলোতেই আঁৎকে উঠে বিরোধীদলকে বিনাশ করতে অস্ত্র নিয়ে নেমেছে সরকারের বাহিনী। ২৮ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত সকল হত্যাকাণ্ড সরকারের মাস্টার প্ল্যান।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অস্ত্রসজ্জিত পুলিশ যে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে, এটি কোনো সংঘর্ষ নয়, সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। লাখ লাখ গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে মুষ্টিমেয় কিছু অস্ত্রধারীর এই মানবাধিকার লঙ্ঘন দেশে-বিদেশে ধিকৃত। বিএনপির নিরস্ত্র নেতা-কর্মীদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালাচ্ছে পুলিশ-র্যাবের একটি উচ্ছিষ্টভোগী অংশ। আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রের মতো নির্বিচারে ও বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করছে বুলেটের গুলি, টিয়ার শেল, লাঠি চার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, আর্মড ভেহিকল ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র।’
তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গণবিরোধী আক্রমণে যুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। আওয়ামী লীগের এই দুষ্কৃতিকারীরা আঘাত করছে স্টিলের পাইপ, লাঠিসোটা, বাঁশ, স্ট্যাম্প, হকিস্টিক, কাঠ ও চাপাতি দিয়ে। যৌথভাবে আওয়ামী লীগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চালিয়ে যাচ্ছে আগুন সন্ত্রাস, পুড়াচ্ছে একের পর এক যানবাহন ও স্থাপনা। তাদের লক্ষ্য সবার কাছে পরিষ্কার, নিজেরা নানা দেশবিরোধী অঘটন ঘটিয়ে তার বেনিফিশিয়ারি হিসেবে বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার প্রহসনমূলক গ্রেফতার ও রায় নিশ্চিত করা।’
তিনি বলেন, ‘শাসকগোষ্ঠীর হাতে চরমভাবে মানবতা লঙ্ঘনের শিকার হয়েও দেশব্যাপী রুখে দাঁড়াচ্ছে নিরস্ত্র গণতন্ত্রকামী জনগণ। খালি হাতে রাজপথে নেমে আসছে, আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। খুনিদের প্রতিহত করছে কখনো রাস্তায় পড়ে থাকা ইট-পাথর দিয়ে, আবার কখন বা অসীম সাহসে আওয়ামী অপশক্তির হাতিয়ার ছিনিয়ে নিয়ে।’
‘প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তে, রক্ত ও জীবন দিয়ে যাচ্ছে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কারণ, লুণ্ঠিত মানবতাকে ধারণ করেই আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। আমাদের অহিংস ও শান্তিপূর্ণ এই সংগ্রাম প্রিয় বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। এই লড়াই ১৮ কোটি মানুষের সত্যিকার স্বাধীনতার জন্য,’ বলেন তিনি।
এ সময় রিজভী সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ‘আজ বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালে কিশোরগঞ্জ জেলাধীন কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ ও ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি মো: বিল্লাল মিয়াকে পুলিশ নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও অনেক নেতাকর্মী পুলিশের ছোড়া গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। সিলেট জেলাধীন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালবাজারে বিএনপির অবরোধ চলাকালে পুলিশ গাড়িচাপা দিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দিলু আহমদ জিলুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলাধীন বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো: জাকির হোসেনকে গ্রেফতারের সময় পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যু হয় তার।