ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ৬৮ কারাগারে প্রতিনিয়ত বন্দীর চাপ বাড়ছে। বর্তমানে ধারণক্ষমতার দ্বিগুন বন্দী অবস্থান করছে কারাগারগুলোতে। এরমধ্যে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সর্বোচ্চ সংখ্যক বন্দী রয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, হিসাব অনুযায়ী এখনো কারাগারে বন্দীর ধারণ ক্ষমতা স্বাভাবিকের মধ্যেই রয়েছে।
এদিকে গ্রেফতার দেখানোর পর আদালতের নির্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রোববার রাত ১০টা ২২ মিনিটে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আজ তাকে প্রথম শ্রেণির বন্দীর মর্যাদা দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি ডিভিশনপ্রাপ্ত সেল হিসেবে পরিচিত চম্পাকলিতে রয়েছেন বলে কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সোমবার সন্ধ্যার আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে ডিভিশন প্রদান করা হয়েছে।
এরআগে কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো: মাইন উদ্দিন ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আজকে (সোমবার) পর্যন্ত গাজিপুরের কাশিমপুরের একমাত্র মহিলা কারাগারসহ দেশের ৬৮ কারাগারে মোট বন্দী অবস্থান করছে ৮৩ হাজার ৮১৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ বন্দী ৮০ হাজার ৫৯৪ জন আর মহিলা বন্দী ৩ হাজার ২২৪ জন।
ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুন বন্দী কারাগারগুলোতে অবস্থান করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ৬৮ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৪২ হাজার ৮৬৬ জন। সেই হিসাবে ৮০-৯০ হাজার পর্যন্ত বন্দী থাকলে সেটিকে স্বাভাবিক বন্দীর ধারণক্ষমতা হিসাবে ধরা হয়।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমানে কাশিমপুরে মহিলা কারাগার থাকলেও উদ্বোধন হওয়া ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশের কারাগারটিতে এখনো মহিলা বন্দী রাখার কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে দেশের জেলা কারাগারগুলোর প্রতিটির একটি অংশে মহিলা বন্দীদের রাখার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সোমবার পর্যন্ত ১১ হাজার ৮১৪ জন বন্দী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থান করছিল। এরমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও আরো যেসব রাজনৈতিক বন্দী অবস্থান করছিলেন তাদের মধ্যে ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, জুরাইনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সেলর মীর হোসেন মীরু এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বেশ কিছু বন্দী।
কারাগারের একটি সুত্রে জানা গেছে, সোমবার বেলা ৩টার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে কারাগারে সাক্ষাত করতে যান তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। তবে অনুমতি না থাকায় মির্জা ফখরুল ইসলামের সাথে তার সাক্ষাত হয়নি। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলামের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের একটি ছোট্ট ব্রিফকেস কারাগার সংশ্লিষ্টদের কাছে দেয়া হয়। এ সময় তার জন্য বাইরে থেকে যে খাবার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই খাবার কারা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেননি বলে জানা গেছে। মির্জা ফখরুল ইসলামকে ডিভিশন সেলে দেয়ার আগে প্রথম রাতটি মেঘনা নামক সেলে কেটেছে।
কারাগারের দায়িত্বশীল অপর একটি সুত্রে জানা গেছে, একজন বন্দীর সাথে নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিন অন্তর তার স্বজনরা একবার কারাগারে সাক্ষাত করতে পারবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরতাল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ২৮ এবং ২৯ অক্টোবর ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় ৪২টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে গত ২৮ তারিখ আদালতের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যায় ৯৪৯ জন বন্দী। পরদিন ৬০০ জনকে সুনিদ্দিষ্ট মামলায় আসামি করে কারাগারে পাঠানো হয়। এসব বন্দী আসার কারণে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।