বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ

Slider বাংলার মুখোমুখি


বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে চতুর্থদিনের মতো আন্দোলন করেছে গাজীপুরের কোনাবাড়ী, শফিপুর ও মৌচাক এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিকরা।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল থেকেই গাজীপুরের কোনাবাড়ী, মৌচাক, শফিপুর ও পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিকরা এ আন্দোলন শুরু করে।

এ সময় তারা বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকারসহ অন্তত অর্ধশত যানবাহন ভাঙচুর করে। আন্দোলনরত শ্রমিকরা একটি জিপ ও মটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

জানা গেছে, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো এ বিক্ষোভ- মিছিল করে। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আন্দোলনরত শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।

এদিকে শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় আশপাশের অধিকাংশ শিল্প কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। যে সকল প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করেনি, সেসব কারখানা বন্ধ করার জন্য আন্দোলন ও মিছিল করে।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, আমাদের বেতন ২৩ হাজার টাকা করতে হবে। দাবির জন্য আন্দোলন করে মার খাচ্ছি আমরা। অথচ অন্য কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করবে এটা হতে পারে না। এজন্য সবাইকে নামানোর চেষ্টা করছি আন্দোলনে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

শ্রমিকরা মৌচাক এলাকা থেকে বিক্ষোভ করতে করতে চন্দ্রার দিকে যায়। যাওয়ার পথে উপজেলার পল্লীবিদুৎ এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওপর থেমে থাকা একটি জিপ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে গাড়িটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এছাড়া শ্রমিকরা আশপাশে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং দু’টি মোটরসাইকেলেও আগুন দেয়। যেসকল প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করেনি, সেসব কারখানা বন্ধ করার জন্য আন্দোলন ও মিছিল করে শ্রমিকরা। পরে শ্রমিকরা চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় কয়েকটি ভবনের গ্লাস ভাঙচুর করে। শ্রমিকরা লাসানিয়া নামের একটি রেস্টুরেন্ট, চন্দ্রা এলাকার ব্যাংক এশিয়ার এ টি এম বুথে ভাঙচুর করে এবং পল্লী বিদ্যুত মোড় এলাকার আশপাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চার্জ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে।

গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এম আশরাফ বলেন, সকালে শ্রমিক বিক্ষোভে কোনাবাড়ি থেকে সফিপুর পুরো ৫ কিলোমিটার সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকেরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছে। সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছেন। শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। পরে শ্রমিকরা ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ এ্যাকশনে যায়।

কালিয়াকৈর উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, একটি জিপ গাড়িতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছে। শ্রমিকরা সকাল থেকে তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। এতে যান চলাচলে ধীরগতি রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা, মহানগর ও শিল্প পুলিশ কাজ করছে।

কারখানা শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ও তেলিরচালা এলাকায় অবস্থিত লাগেজ এ্যাপারেলস লিমিটেড, এটিএস এ্যাপারেলস লিমিটেড হাইড্রোঅক্সাইড লিমিটেড এবং কোনাবাড়ি এলাকার এলজেড লিমিটেড, ওরিয়েন্ট এলিউর লিনজেরি লিমিটেড নামক কারখানার শ্রমিকরা সকালে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় শ্রমিকরা তাদের বেতন নুন্যতম ২৩ হাজার টাকা করার দাবি জানায়। এছাড়া মৌচাক এলাকার গ্লোবাস, কোকোলাসহ বেশ কয়েকটি কারখানা শ্রমিকরা একই দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মঈনুল হক জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী, মৌচাক ও শফিপুর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে মহাসড়কে থেকে সরিয়ে দেয়ার পরপরই তারা মহাসড়কের অন্য অংশে অবরোধ করছে। এতে মহাসড়কে যান চলাচলের বিঘ্ন হচ্ছে। শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে তেলিচালা এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানায় আজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক, সফিপুর, তেলিরচালা, কোনাবাড়ি এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *