দাবি আদায়ে গণমানুষের প্রবল তরঙ্গ-স্রোত ধেয়ে আসছে ঢাকায় : রিজভী

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আগামী শনিবার আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি আদায়ে সারাদেশের গণমানুষের ঢাকামুখী প্রবল তরঙ্গ-স্রোত ধেয়ে আসছে। স্বৈরাচার পতনের আওয়াজ আসছে রাজপথ থেকে। এ যৌবন জলতরঙ্গ রোধিবি কি দিয়া বালির বাঁধের দৃশ্যপট রচিত হয়েছে। ফুঁসে উঠেছে গোটা দেশবাসী।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, তারা দিশাহীন, উন্মাদ হয়ে পাইকারি গ্রেফতার, আর্তচিৎকার-হুঙ্কার, খুনের হুমকি দিয়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির ব্যর্থ চেষ্টা করছে। জনগণের আন্দোলনের জলোচ্ছ্বাস রুখতে এই পলায়নপর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতারা আবারো ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের মতো লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যার নির্দেশ দিচ্ছে। গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারা সন্ত্রাসীদের দল আওয়ামী লীগের নেতারা বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণের নির্দেশ দিচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে ঘেরাও করে মারার হুমকি দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমরা বার বার বলেছি আমাদের আন্দোলন জনগণের ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশও হবে শান্তিপূর্ণ। কিন্তু গতকাল আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের দলীয় ক্যাডারদের মোটা মোটা লাঠি নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়ে ঢাকাকে নৈরাজ্যপুরিতে পরিণত করার নির্দেশ দিয়েছেন। যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১৭৩ দিন জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের নামে গণপরিবহনে আগুন, ব্যাংকে আগুন, পেট্টোল পাম্পে আগুন, রেল লাইন উৎপাটন করে আগুন, চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেশজুড়ে নজিরবিহীন তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল, সেই জঙ্গী দলটি আজ জনগণের তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ভোটাধিকারের দাবি রুখে দিতে রক্তপিপাসু হয়ে উঠেছে। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে জনগণের কস্টার্জিত টাকায় বেতনভোগী পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আওয়ামী দলীয় পোষ্য দলদাস কর্মকর্তারা। তাদের বিরোধীদল দলন-দমন-নিঃশেষ করার ভয়ঙ্কর হুঙ্কার আর গ্রেফতার তাণ্ডব সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে। কিন্ত তাদের জানা উচিত এই নিশুতি সরকারই শেষ সরকার নয়। অতিসত্ত্বর হবে জনগণের সরকার। তখন এই দলদাস পোশাকী সন্ত্রাসীদের পরিণতি কী হবে জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এই রক্তপিপাসু জালিম সরকার বিনা ভোটে তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে এই বাংলাদেশে আজ সবাই বন্দী, সবাই পরাধীন। দেশের মানুষের হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের দিয়ে জেলগুলো ভরে ফেলা হয়েছে, জেলখানায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে এখন তিনগুণের বেশি বন্দী। দুঃসহ বন্দীজীবনে শ্বাসবায়ু প্রাণভরে কেউ গ্রহণ করতে পারছে না। অসংখ্য মানুষ হামলা, মামলা, হুলিয়া, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গত ১৫ বছরে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে দেড় লাখের বেশি মিথ্যা গায়েবি মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় অর্ধ কোটি। হামলা, মামলা, অপহরণ, গুম, খুনের এক ভয়াবহ বিভীষিকায় বাংলাদেশ আজ ছেয়ে গেছে। ঘরে ঘরে আজ হাহাকার। স্বজন হারানো কান্নার রোলে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সর্বগ্রাসী লুটপাটে দুর্ভীক্ষ চলছে। নিরন্ন মানুষ। ভূখা নাঙ্গাদের ভীড় বাড়ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি দাড়িয়ে জনগণের প্রাণভোমরা, এই আন্দোলনের সিপাহসালার, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৮ অক্টোবরের স্মরণকালের সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশে যোগদানের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের লড়াইয়ে অংশ নিতে দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কতৃর্ক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, কুষ্টিয়ায় কৃষকদলের এক নেতাকে আটক করে পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। এবং ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে গতরাত ২টার সময় সিপাহীবাগের নবীনবাগ ক্যান্ট রেস্টুরেন্টের বিল্ডিংয়ে খায়রুল কবির খোকনের ভাইয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। কুষ্টিয়া জেলা কৃষকদলের সদস্য মেহেদী হাসান সাকিবকে গভীর রাতে গ্রেফতার করার পর পুলিশী নির্যাতনে মৃত্যু হয়। এই নিষ্ঠুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *