ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ : কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে মৃত্যু বেড়ে ৬

Slider চট্টগ্রাম


ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের তিন এলাকায় তিনব্যক্তি এবং চট্টগ্রামের দুই উপজেলায় আরো তিনজনের প্রাণহানি ঘটে। প্রবল বাতাসে ক্ষতি হয়েছে হাজার হাজার বাড়িঘর ও গাছপালার। অন্যদিকে কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক আগাম বার্তা না পাওয়ায় যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, হামুনের তাণ্ডবে কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছেন। মঙ্গলবার রাতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তিনজন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে পৌরসভা এলাকা, মহেশখালী ও চকরিয়ায় একজন করে মারা গেছেন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় দেয়াল ও গাছচাপা পড়ে তাদের মৃত্যু হয়।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঝড়ে মঙ্গলবার রাতে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়তলী এলাকায় আধা পাকা ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে আবদুল খালেক (৪০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন।

মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হক জানান, বড় মহেশখালী ইউনিয়নে রাতে ঘরের সামনে গাছ চাপা পড়ে হারাধন দে (৪৫) নামে একজন মারা গেছেন। তিনি মাথায় আঘাত পান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। চকরিয়াতেও গাছ চাপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে কক্সবাজার শহরের ঘরবাড়ি ও গাছপালাসহ বহু স্থাপনা। মঙ্গলবার রাত ৭টার দিকে হামুন উপকূল অতিক্রম শুরু করার পর প্রাথমিক আঘাতে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে বিপুলসংখ্যক বাড়িঘর ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে বাতাসের গতি ছিল অনেক বেশি। সেসময়ে অনেক ঘরবাড়ি উড়ে যায়। বড় বড় অনেক গাছও দুমড়ে-মুচড়ে পড়েছে। ভেঙে উড়ে গেছে দোকানপাটও। কক্সবাজার শহরের মতো মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় ভেঙেছে গাছগাছালি। এতে অনেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে ঝড়ের বড় প্রভাব পড়েনি।

সঠিক আগাম বার্তা না পাওয়ার অভিযোগ
ঈদগাঁও (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুন নিয়ে যথাযথ আগাম সতর্কবার্তা দিতে পারেনি আবহাওয়া অফিস। ফলে ঘূর্ণিঝড়টি কাছাকাছি দুরত্বে এগিয়ে এলেও তথ্য বিভ্রাটের কারণে উপযুক্ত প্রস্তুতি নিতে পারেননি জেলাবাসী। এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়ে কক্সবাজার উপকূলে।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, কক্সবাজার এলাকা ছিল ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায়, আর ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করার পূর্বাভাস ছিল চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলার উপর দিয়ে। কিন্তু আগাম হুঁশিয়ারি ছাড়াই মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরপর কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় হামুন। কিন্তু বাতাসের গতিবেগ ছিল ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের মতো। এতে প্রবল বাতাসে বড় বড় গাছ উপড়ে জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে যান ও লোক চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। একই সময় প্রবল ঝড়ো হাওয়া আঘাত হানে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায়।

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বশির আহমদ জানান, সন্ধ্যার পর থেকে বাতাসের গতি ছিল অনেক বেশি। সেসময়ে অনেক ঘরবাড়ি উড়ে গেছে। বড় বড় অনেক গাছও দুমড়ে-মুচড়ে পড়েছে।

অচল রাডার স্টেশন : গভীর সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়সহ নানা দুর্যোগের আগাম বার্তা সংগ্রহে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কক্সবাজারের রাডার স্টেশনটি অচল হয়ে পড়েছে। যান্ত্রিক ক্রটির কারণে এটি অচল থাকার কথা মঙ্গলবার দুপুরে স্বীকার করেন আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো: ইমাম উদ্দিন। তিনি জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার স্টেশনের রাডারটি অচল রয়েছে। যেটির মাধ্যমে কক্সবাজার স্টেশন থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরবর্তী সমুদ্র এলাকার আবহাওয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি যান্ত্রিক ক্রটির কারণে এটি অচল থাকায় আবহাওয়ার সার্বিক তথ্যাদি যথাযথ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দেশের অন্য রাডার স্টেশনগুলো সচল থাকায় আবহাওয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। কক্সবাজারের রাডারটি সচল থাকলে আরো তথ্যাদি সরবরাহ করা সম্ভব হতো।

জেলা প্রশাসক মো: শাহীন ইমরান দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রাণহানি ছাড়া দূর্যোগের কারণে অন্য ক্ষয়ক্ষতি তাৎক্ষনিকভাবে নিরুপন করা এখনো সম্ভব হয়নি।

বাঁশখালীতে ৫ হাজার বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, হামুনের তাণ্ডবে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ৪ হাজার ৯৪৪টি বসতবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বাঁশখালীসহ চট্টগ্রাম জেলার ২৫টি ইউনিয়নে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া বাঁশখালী ও সাতকানিয়ায় গাছচাপা ও আতঙ্কে দুই বৃদ্ধাসহ তিনজন মারা গেছেন। বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকা।

রাতে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নিহতরা হলেন বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের কবির আহমদের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৭০), কাথাড়িয়া ইউনিয়নের ফজর আহমদের ছেলে মমতাজ মিয়া (৫৫) এবং সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নের মৃত নুর আহমদের স্ত্রী বকুমা বেগম (৬৫)।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিলটন বিশ্বাস।

এ দিকে ঘুর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও জোয়ারা ইউনিয়নের পাক্কা দোকান এলাকায় গাছ উপড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রায় ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় পড়ে যাওয়া গাছ কেটে সড়ক যোগাযোগ সচল হয়।

জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, জেলার ২৫টি ইউনিয়নের মধ্যে বাঁশখালীতে ২৮৩ বসতবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৪ হাজার ৬৬১টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আবদুস সোবহান জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে কৃষিখাতে জেলার ৭ উপজেলায় কয়েক হাজার কৃষকের আমন ধান শাকসবজি পান বরজের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। দুই-একদিনের ভেতরে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত বিবরণ জানা যাবে বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *