রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরে পান দোকানদারের মাত্র ৫ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের প্রতিশোধ নিতে দুই সহোদর ভাইকে নৃসংশভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ৩ দিনের মাথায় মঙ্গলবার ভোড়ে ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামীকে গ্রেফতারের পর জিগ্যাসাবাদে ধৃত আসামী র্যাবের কাছে এসব কথা স্বীকার করেছে।
গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যার পর,গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন বাঙ্গালগাছ সাকিনস্থ বাঁশবাজার তিন রাস্তার মোড় এলাকায় দুই সহোদর ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৪ অক্টোবর ভোরে এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারের পর ধৃত আসামী স্বীকার করেছে, ঘটনার দুইদিন আগে ঘাড়ে চাপাতি ধরে ৫ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের প্রতিশোধ নিতেই দুই সহোদরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত দুই সহোদর হলো, শফিকুল ইসলম (২৫) ও শুক্কুর আলী(২২)। উভয়ে ময়মনসিংহ জেলারন নান্দাইল থানার মহেষকুড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে। তারা গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন ভুরুলিয়া এলাকায় আঃ রশিদের বাড়ীতে পরিবারের সাথে ভাড়া থাকত।
গ্রেফতার আসামীর নাম মোঃ আব্দুল আউয়াল (৫১)। তিনি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার বাশবুনিয়া এলাকার মৃত হাতেম আলীর ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন বাঙ্গালগাছ এলাকায় ভাড়া বাড়ীতে বসবাস করেন। তিনি বাঙ্গালগাছ বাঁশবাজার এলাকায় পান দোকানদার।
মঙ্গলবার বেলা ১টায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-১ এর স্পেশালাইজড কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্প কোম্পানী কমান্ডার মেজর মোঃ ইয়াসির আরাফাত হোসেন।
তিনি আরো জানান, গত ২০ অক্টোবর দুই সহোদর ভাইকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠি-সোঠা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপুরি আঘাত করতঃ কোপ দিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করে অজ্ঞাত আসামীগণ পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতদের পিতা মোঃ আবুল কাশেম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে সদর মেট্রো থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরো জানান, মামলা হওয়ার পর আসামীগণ গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করে। দুই সহোদরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীদের সনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য র্যাব-১, এর একটি আভিযানিক দল এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে র্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানীর আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে যে, ঘটনায় জড়িত প্রধান পলাতক আসামী মোঃ আব্দুল আউয়াল গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন শিমুলতলী বাজার সমরাস্ত্র কারখানা এলাকায় আত্মগোপনে আছে। পরে র্যা ব-১ এর আভিযানিক দলটি কোম্পানী কমান্ডার মেজর মোঃ ইয়াসির আরাফাত হোসেনের নেতৃত্বে উক্ত স্থানে অভিযান চালিয়ে মোঃ আব্দুল আউয়ালকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিগ্যাসাবাদে আব্দুল আউয়াল স্বীকার করেছেন, ঘটনার দিনে নিহত দুইভাইসহ ৪ জন একটি অটোরিক্সা যোগে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঙ্গালগাছ বাজারে জনৈক বিল্লালের দোকানে ভাংচুর করে, পরে গ্রেফতার আসামী আব্দদুল আউয়ালের শ্যালক রাসেলের মুদি দোকানের ফ্রিজ ভাংচুর করে এবং দোকানের সিসি ক্যামরার যন্ত্রপাতি নিয়ে যায়। পরে তারা জনৈক জুলহাসের গাড়ী ওয়াশিং পয়েন্ট এ জুলহাস ও মমিনের সাথে কথা কাটাকাটির পর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। হাতাহাতির এক পর্যায়ে বাজারের চারদিক হতে ধৃত আসামী আব্দুল আউয়ালসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জন মিলে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে ভিকটিম শফিকুল ইসলাম ও শুক্কুর আলীকে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এছাড়াও ধৃত আসামী মোঃ আব্দুল আউয়াল র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে, গত ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় আব্দুল আউয়াল দোকানের পান সুপারি ও অন্যান্য মালামাল ক্রয় করার জন্য জয়দেবপুর বাজারে যাওয়ার পথে হাজীবাগ রোডে পৌছামালে নিহত শফিকুল ইসলাম ও শুক্কুর আলীসহ ৫জন ধৃত আসামীর পথরোধ করে। পরে শফিকুল ইসলাম ধৃত আসামী আব্দুল আউয়ালের ঘাড়ে চাপাতি ধরে সাথে থাকা ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এই ক্ষোভে তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে শফিকুল ইসলাম ও শুক্কুর আলী দুই সহোদরকে হত্যা করেছে।