ঘূর্ণিঝড় হামুন : আঘাত হানতে পারে বুধবার

Slider সারাদেশ


বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে সেটির নাম হবে হামুন।

গভীর নিম্নচাপটির গতি এখন যেভাবে আছে, ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ওই গতিতে আগাতে থাকলে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতের আবহাওয়া দফতরের বুলেটিনে বলা হচ্ছে, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে সেটি বুধবার বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার খেপুপাড়া উপজেলা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী উপকূল অতিক্রম পড়তে পারে।

এটি ঘূর্ণিঝড় হামুনে পরিণত হলে সেটি হবে চলতি বছরের দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। এর আগে গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে প্রভাব ফেলেছিল।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, হামুন নামটি ইরানের দেয়া। যার অর্থ হচ্ছে সমতল ভূমি বা পৃথিবী।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, এর গতিপথ কেমন হবে এবং বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে কি-না এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপটি শক্তি অর্জন করতে করতে ক্রমশ উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা নাগাদ গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তার গতিবেগ বৃদ্ধি পাবে এবং গতিপথ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

তার মতে, ঘূর্ণিঝড় অনেক সময় এর গতিবেগ ও গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে বা একই জায়গায় আবর্তন করতে পারে। সুতরাং উপকূল অতিক্রমের সময় এদিক ওদিক হতে পারে।

তিনি জানান, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকাগুলোয় হালকা থেকে মাঝারি এবং কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এছাড়া নিম্নচাপের কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

আগামী দুই-তিন দিন চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের উপকূলীয় এলাকা এবং একই সাথে ঢাকা ও দেশের অন্য অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হতে পারে।

এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরে এক নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

একই সাথে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে, যেন অতি অল্প সময়ের নির্দেশে তারা নিরাপদ আশ্রয় যেতে পারে।

একই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

উপকূলবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের ঘোষণা আসার সাথে সাথে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে।

এদিকে সাগরে সতর্ক সঙ্কেত দেয়ার পরপরই বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় মাইকিং করে স্থানীয়দের সতর্ক করছে কোস্টগার্ড সদস্যরা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে দেখা গেছে, কোস্টগার্ড সদস্যরা নদী তীরবর্তী এলাকায় মাইকিং করে বলছে যে সতর্কবার্তা বাড়ার সাথে সাথে এই এলাকার মানুষ যেন আশপাশের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে চলে যায়।

ঘূর্ণিঝড়টি মোংলা সমুদ্র উপকূলের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকায় এই আগাম প্রচারণা শুরু করে তারা।

এদিকে সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত সকল পর্যটককে তিনটি জাহাজে করে টেকনাফে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে সেন্টমার্টিন অভিমুখে জাহাজসহ সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ থাকবে বলা জানিয়েছেন টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী।

তবে ঘূর্ণিঝড়ের ঘোষণা আসামাত্রই সঙ্কেত বাড়িয়ে দেয়া হবে বলেও জানায় আবহাওয়া অফিস।

এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে বুধবার ভোর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ সেটি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, গভীর নিম্নচাপটি বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে এবং সামান্য উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় আছে।

তবে সোমবার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটি বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৬৩০ থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।

দুপুর ১২টার দিকে নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৫৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এটি আরো উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাস একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৫০ কিলোমিটার দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে সোমবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়।

বাংলাদেশের মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস ঘূর্ণিঝড় প্রবণ।
সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *