বিশ্বকাপের আন্ডারডগ আফগানিস্তান। প্রত্যাশিত হার দিয়ে শুরু হয়েছিল এই আসর। যদিও ভারতের চেনা কন্ডিশনে কিছু একটা করে দেখানোর আত্মবিশ্বাসের বীজ ঠিক রোপণ করেছিল তারা। বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে হারের পর তার প্রতিফলন। বিশ্বকাপে টানা ১৪ ম্যাচ হারের পর দিল্লিতে তারা বধ করেছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক জয়। এবার সেই প্রেরণা কাজে লাগিয়ে কল্পনাকে হার মানিয়ে চেন্নাইতে প্রতিবেশী পাকিস্তানকে পরাজয়ের স্বাদ দিলো আফগানরা।
বাবর আজম, আব্দুল্লাহ শফিকের হাফ সেঞ্চুরির পর ইফতিখার আহমেদ ও শাদাব খানের ক্যামিও ইনিংসে ২৮২ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর করে পাকিস্তান। স্পিনাররা সব মিলিয়ে ৩৮ ওভার করে তাদের রানের লাগাম টেনে ধরে আফগানিস্তান। কিন্তু ব্যাটিংয়ে জাদু দেখিয়ে তারা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী পেস আক্রমণ নিয়ে ছেলেখেলা করবে, তা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেনি কেউ। ৬ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের জয় পেলো তারা। ওয়ানডেতে সাতবারের দেখায় প্রথমবার পাকিস্তানকে হারের স্বাদ দিলো আফগানিস্তান। গত দুই আসরে মাত্র একটি ম্যাচ জেতা দলটি এবার দুই ফেভারিটকে হারিয়ে চমক দেখালো।
লক্ষ্যে নেমে প্রথম ওভারেই শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে ১০ রান আদায় করেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। ষষ্ঠ ওভারে এই জুটি ভাঙার সংকেত দেন আম্পায়ার। ইব্রাহিম কট বিহাইন্ডের বিপরীতে রিভিউ নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলে দেন।
অষ্টম ওভারে হারিস রউফ বল হাতে নিয়েই বিপাকে পড়েন। গুরবাজের চারটি চারে ওই ওভারে যোগ হয় ১৭ রান। পাকিস্তানের নির্বিষ বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে কোনও উইকেট না হারিয়ে আফগানরা করে ৬০ রান, বিশ্বকাপে যা তাদের তৃতীয় সর্বোচ্চ।
তারপর থেকে প্রতি ওভারেই রান রেট ঠিক রেখে এগোতে থাকেন দুই ওপেনার। ১৫তম ওভারে ইব্রাহিম ফিফটি করেন, পরের ওভারে গুরবাজ। ওয়ানডেতে চতুর্থবার তাদের জুটি একশ ছাড়ায়। এই প্রথমবার বিশ্বকাপ ম্যাচে আফগানিস্তানের দুই ওপেনার পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস খেলেন।
১১ থেকে ২০ ওভারে উদ্বোধনী জুটিতে ৬৮ রান তোলে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপে যে কোনও উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি গড়া থেকে তিন রান দূরে থাকতে আউট হন গুরবাজ। আফ্রিদির বলে উসামা মীরকে ক্যাচ দেন তিনি। তার ৫৩ বলে ৬৫ রানের ইনিংসে ছিল ৯ চার ও ১ ছয়। ১৩০ রানে ভাঙে এই জুটি।
এই জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর কিছুটা মন্থর হয়ে পড়েছিল রানের গতি। তবে ইব্রাহিম মাঝেমধ্যে চার মেরে রানের চাকা সচল রাখেন। ৩৪তম ওভারে তাকে থামতে হয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে আফগানিস্তানের হযে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৭ রান করে হাসান আলীর শিকার হন ইব্রাহিম। ১১৩ বলে ৮৭ রানের ইনিংসে ছিল ১০ চার।
দুই ওপেনারের প্রচেষ্টা বিফলে যায়নি। রহমত শাহ ধরেন হাল। সঙ্গে ছিলেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদী। শেষ ১০ ওভারে তারা লক্ষ্য ৬২ রানে নামিয়ে আনেন। ৪১তম ওভারে ফিফটি করেন রহমত। আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ ইতিহাসে একই ইনিংসে তিনটি হাফ সেঞ্চুরির ঘটনা এই প্রথম।
দুজন অপরাজিত ৯৬ রানের জুটিতে দলকে জয়ের বন্দরে নেন। ৪৯তম ওভারের শেষ বলে হাশমতউল্লাহ চার মেরে ইতিহাস গড়ার উল্লাসে মাতেন। ৪৯ ওভারে ২ উইকেটে ২৮৬ রান করে তারা, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতলো আফগানিস্তান। রহমত ৭৭ রানে ও হাশমতউল্লাহ ৪৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
পাঁচ ম্যাচ শেষে টানা তিন হারে ৪ পয়েন্ট নিযে পঞ্চম স্থানেই আছে পাকিস্তান। আফগানিস্তান সমান খেলে একই পয়েন্ট নিযে ছয়ে উঠে গেছে।