অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শুরুতেই উইকেট নেওয়ার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের। সেজন্যই বেঙ্গালুরুতে টসে জিতে ফিল্ডিং নেন তাদের অধিনায়ক বাবর আজম। দ্রুতই উইকেট তারা নিয়েছে, কিন্তু শেষ ১০ ওভারে। তার আগে মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নার পাকিস্তানের শুরুর পরিকল্পনা ভেস্তে দেন। দুই ওপেনারের সেঞ্চুরিতে আড়াইশ ছাড়ানো জুটি যত বড় স্কোরের আভাস দিয়েছিল, সেটা হয়নি পাকিস্তানের ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ে। শাহীন শাহ আফ্রিদি পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রানের লাগাম টেনে ধরেন। তাতে ৯ উইকেটে ৩৬৭ রান করে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এই আসরেই বিশ্বকাপের রেকর্ড রান তাড়া করে জিতেছিল পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিল ৩৪৫ রান। জয়ে ফিরতে হলে এবার নিজেদের রেকর্ডই ভাঙতে হবে বাবরদের।
ইনিংসের প্রথম বলেই আফ্রিদি এলবিডব্লিউর আবেদন করেন। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর। বল ব্যাটে ইনসাইড এজ হয়ে প্যাডে লেগেছিল। অবুঝের মতো রিভিউ নিয়ে নষ্ট করে পাকিস্তান।
মার্শ ওই ওভারে ছক্কা মেরে রানের খাতা খোলেন। বাকি সময়ও একই মনোভাব নিয়ে খেলেছেন। বিশেষ করে পাওয়ার প্লের শেষ দুই ওভারে তাণ্ডব চালান তারা। প্রথম আট ওভারে ৪৩ রান তোলেন ওপেনিং জুটি।
পরের দুই ওভারে আসে ৩৯ রান! হারিস রউফ দেন ২৪ রান, ইফতিখার আহমেদ খরচ করেন ১৫ রান। অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে (১০৮৫) টপকে যান ডেভিড ওয়ার্নার। তার ওপরে কেবল রিকি পন্টিং (১৭৪৩)।
পাওয়ার প্লেতে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৮২ রান, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে তাদের সর্বোচ্চ। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ১০ ওভারে ৮০ রানের কীর্তিকে পেছনে ফেলেন ওয়ার্নার-মার্শ। ১৩তম ওভারে দুটি রান নিয়ে ফিফটি করে দলীয় স্কোর একশতে নেন ওয়ার্নার। দুই ওভার পর টানা দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পান মার্শ। ২১তম ওভারে এই জুটি দেড়শ ছোঁয়।
২৭তম ওভারে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন মার্শ-ওয়ার্নার। ২০১১ সালে একই ভেন্যুতে কানাডার বিপক্ষে শেন ওয়াটসন ও ব্র্যাড হাডিনের ১৮৩ রানের রেকর্ড ভেঙে ফেলেন তারা।
৩০তম ওভারে মার্শ ছক্কা মেরে দলীয় স্কোর দুইশতে নেন। পরের ওভারে ওয়ার্নার পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেন সিঙ্গেল নিয়ে। পরের বলে বার্থডে বয় মার্শও তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান। বিশ্বকাপের এক ম্যাচে দুই ওপেনারের সেঞ্চুরির ঘটনা এনিয়ে ঘটে চতুর্থবার। সপ্তম ব্যাটার হিসেবে জন্মদিনে সেঞ্চুরি করলেন মার্শ, যে কীর্তি হলো বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার।
৩৪তম ওভারে ব্রেকথ্রু আনেন আফ্রিদি। মার্শ ১২১ রান করে উসামা মীরের ক্যাচ হন। ব্যক্তিগত ১০ রানে অজি ওপেনারকে জীবন দেওয়ার প্রায়শ্চিত্ত করেন পাকিস্তানি ক্রিকেটার। ২৫৯ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। মার্শের ১০৮ বলের ইনিংসে ১০ চার ও ৯ ছয় ছিল। পরের বলে আফ্রিদি ফেরান গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেও পারেননি পাকিস্তানি পেসার।
স্টিভ স্মিথ ১ রানে প্রথম স্লিপে বাবর আজমের হাতে জীবন পান। বোলিংয়ে ছিলেন উসামা। অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি স্মিথ, উসামার বলেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন ৭ রান করে।
শেষ পাওয়ার প্লের প্রথম বলে ছক্কা মেরে সপ্তমবার দেড়শ রান করেন ওয়ার্নার, দলীয় স্কোরও তিনশ ছাড়ায়। ৪ ওভারে ৫৯ রান দেওয়া রউফ দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে নেমেই অজি ওপেনারের কাছে ছক্কা হজম করেন। তবে পরের বলেই তাকে থামান পাকিস্তানি পেসার। ১২৪ বলে ১৪ চার ও ৯ ছয়ে এই বিশ্বকাপের সেরা ইনিংস খেলে আউট হন ওয়ার্নার, করেন ১৬৩ রান।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। চার মেরে রানের খাতা খোলা জশ ইংলিস (১৩) রউফের শিকার হন। ২১ রান করে আফ্রিদির তৃতীয় শিকার মার্কাস স্টয়নিস।
শেষের আগের ওভারে রউফের বলে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে বদলি ফিল্ডার শাদাব খানের হাতে ধরা পড়েন মার্নাস লাবুশেন (৮)। শেষ ওভারে আফ্রিদি তার চতুর্থ শিকার বানান মিচেল স্টার্ককে (২)। পরের বলে জশ হ্যাজেলউডকে ফিরিয়ে ম্যাচে দ্বিতীয়বার হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেন পাকিস্তানি পেসার। পরের বল অ্যাডাম জাম্পার লেগস্টাম্প ঘেষে ওয়াইড হলে হ্যাটট্রিকবঞ্চিত হন আফ্রিদি।
শেষ ১০ ওভারে আফ্রিদি ও রউফের দারুণ বোলিংয়ে ৭০ রান দিয়ে পাকিস্তান নেয় ৬ উইকেট। দুজনই এই সময়ে তিনটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন। তাদের চমৎকারিত্বে অজিরা চারশ ছাড়ানোর আভাস দিলেও পারেনি।
আফ্রিদি ১০ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট। রউফ ৮ ওভারে ৮৩ রান খরচায় পান ৩ উইকেট।