বাংলাদেশ আর ভারতের লড়াই এখন আর অন্য আট-দশটা সাধারণ ম্যাচের মতো নয়, উত্তেজনা আর শিহরণে গা হয়ে উঠে ছমছমে। লড়াইটা এখন আর শুধু জয়-পরাজয়ে নেই; পানি গড়িয়েছে বহুদূরে। আর তা যদি হয়, বিশ্বকাপের মঞ্চ, রোমাঞ্চের পারদটা অনায়াসেই আরো এক ধাপ উপরে উঠে।
দু’দলের লড়াই মাঠ থেকে মাঠের বাইরেই যেন বেশি প্রভাব ছড়ায়। দুই দলের সমর্থকেরা মেতে উঠেন উন্মাদনায়। চলে অর্জনের গর্জন আর কথার লড়াই। কেউ ব্যঙ্গ করে, কেউ করে বড়াই। এমনি উত্তেজনাকর ম্যাচে আজ বৃহস্পতিবার পুনে হবে মুখোমুখি লড়াই। খেলা শুরু বেলা আড়াইটায়।
২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথম দেখায় তারকায় ভরপুর ভারতকে চমকে দিয়ে বিদায় করে আসর থেকে। ২০১১ বিশ্বকাপে অবশ্য পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ। লড়াইটা হয় একপেশে। ২০১২ এশিয়া কাপে অবশ্য বাংলাদেশই বিজয়ী হাসি হাসে।
তবে গল্পটা বদলে যায় ‘১৫-এর বিশ্বকাপে। প্রথমবারের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে মুখোমুখি হয় ভারতের। গুরুত্বপূর্ণ সেই ম্যাচে আম্পায়ারদের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বলি হয় বাংলাদেশ। যা মানতে পারেনি সমর্থকেরা, নেমে আসে রাস্তায়! সেখান থেকেই বাংলাদেশ – ভারত এখন আর নিছকই কোনো ম্যাচ নয়, এ যেন আগুনে লড়াই।
এই উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেয় নিদাহাস ট্রফি ও এশিয়া কাপের ফাইনাল। দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোও রেখেছে বড় ভূমিকা। ভূমিকা রাখে ভারতের দর্প অহমিকা।
এশিয়ার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল ভারত, বিশ্বকাপেও দারুণ করছে তারা৷ একে তো স্বাগতিক দেশ, তার উপর টানা তিন জয়; আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর রোহিত শর্মারা। তবে ছেড়ে কথা বলবে না বাংলাদেশও, যা দেখেছে সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপও।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানও কথা বলছে বাংলাদেশের পক্ষে। শেষ চার দেখায় টাইগাররা জিতেছে তিন ম্যাচেই! ফলে ভারত বধ এখন আর অঘটন নয়। যদিও ইতিহাস, ঐতিহ্য, পরিসংখ্যান, সক্ষমতা, শক্তিমত্তা, বর্তমান ফর্ম কিংবা অর্জন; সব দিকেই বাংলাদেশের থেকে ঢের এগিয়ে ভারত।
সব মিলিয়ে দুই দল এখন পর্যন্ত খেলেছে ৪০টি ওয়ানডে। ৩১ ম্যাচেই জিতেছে তারা। বাংলাদেশের জয় ৮ ম্যাচে।
দুই দলের দেখায় সর্বোচ্চ ৮০৭ রান বিরাট কোহলির, দুইয়ে থাকা সাকিব আল হাসান করেছেন ৭৫১ রান। তিনে আছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত, ৭৩৮ রান তার। চারে থাকা মুশফিকের রান ৬৬৫।
উইকেট তালিকায় অবশ্য আধিপত্য বাংলাদেশেরই। সর্বোচ্চ ২৯ উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। মোস্তাফিজুর রহমানের আছে ২৫ উইকেট। তিনে থাকা মাশরাফীর ২৩ ও ছয়ে থাকা তাসকিন নিয়েছেন ১৪ উইকেট।
দলীয় সর্বোচ্চ রানে পাঁচে-পাঁচ ভারতের, গত বছর সর্বোচ্চ ৪০৯ রান তুলেছিল তারা। সর্বনিম্ন অবশ্য বাংলাদেশেরই, ৫৮। রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় জয় ভারতের, ২২৭ রানে একবার টাইগারদের হারায় তারা। ৯ উইকেটেও হারিয়েছে বেশ কয়েকবার।
এদিকে খুব কঠিন সময় যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের। টানা ম্যাচ খেলার ধকল, সাথে জোড়া হারের ধাক্কা; আত্মবিশ্বাসে ধরেছে ফাটল, ভর করেছে বিষণ্নতা। নিজেদের ফিরে পেতে একটা জয় চাই খুব করে। বিশ্বাস রাখি, পারবে বাংলাদেশ।