সরকারের দুঃশাসনের অন্ধকারে গণতন্ত্রের সব আলোটুকু গিলে ফেলেছে : রিজভী

Slider রাজনীতি


বর্তমান সরকার দুঃশাসনের অন্ধকারে গণতন্ত্রের সব আলোটুকু গিলে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

আজ সোমবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, দেশবাসী জানে, একজন ব্যক্তির জীবন-মরণের বেদনার্ত করুণ সন্ধিক্ষণের কাহিনী। এ ব্যক্তিটি বিপুল জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। যিনি জীবনে কখনোই নির্বাচনে পরাজিত হননি, তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে আপসহীন সংগ্রামে। এই ব্যক্তির নিরন্তর সংগ্রাম ছিল অবরুদ্ধ গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের। তিনি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে নির্ভিক যোদ্ধার মতন তেজদীপ্ত। তিনি দেশের অগ্রগতি ও প্রগতির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তার আহবানে ছাত্র-যুবক-নারী পুরুষ নির্বিশেষে জনতা বুক চিতিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করত না। তিনি দেশবাসীর শুভেচ্ছা, ভালোবাসায় সমাদৃত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সংগ্রামী মানুষ যে আবেগজনিত শক্তি অর্জন করেছে তার প্রেরণা বেগম খালেদা জিয়া। যিনি আজ স্বৈরশাহীর নিষ্ঠুর আচরণে জীবন-মৃত্যুর টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত।

তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসা থেকে দেশনেত্রীকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে পৃথিবী থেকে সরানো।

রিজভী বলেন, ২০১৭ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়েছিলেন। তিন মাস পর সেপ্টেম্বরে তিনি যখন দেশে ফেরেন তখন তিনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। এর কয়েক মাস পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে একটি মিথ্যা মামলার ফরমায়েশী রায়ে তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর দৃশ্য দেশবাসী সবাই ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে অবলোকন করেছে। দেশনেত্রী হেঁটেই কারাফটক পার হয়েছেন। তাহলে সোয়া দুই বছরে তিনি কেন এত গুরুতর অসুস্থ হলেন? হিংসা, রক্তপাত, দ্বেষ আর অসততার সংমিশ্রণে যদি রাষ্ট্রনীতি প্রনয়ন করা হয়, তাহলে ভয়ানক অশুভ কিছু ঘটানো যায়। স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনীতির নামে বিরোধী নেতাকে হত্যার নানা দৃষ্টান্ত আছে দুনিয়াজুড়ে। রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেকসাই নাভালিনের চায়ের মধ্যে বিষ মেশানো হয়, বিজ্ঞানীরা অসুস্থ ইয়াসির আরাফাতের শরীরে বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ পলেনিয়ামের অস্তিত্ব শনাক্ত করেছেন। এটাই তার মৃত্যুর কারণ। চীনে চীন বংশের সম্রাট হুন কুয়াংশু ক্ষমতাচ্যুৎ হলে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় বিষ খাইয়ে তাকে মারা হয়েছে। একজন মোঘল সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহচর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা করতে দেয়া হয়নি ফরাসি চিকিৎসককে। কারণ পরবর্তীতে মোঘল সম্রাটের বিরাগভাজন ছিলেন তিনি। সারাবিশ্বে এহেন দৃষ্টান্ত ভুরিভুরি। কতৃর্ত্ববাদী নাৎসী একদলীয় শাসনব্যবস্থায় বিরোধী নেতাদের কারাগারে বিষ প্রয়োগে হত্যার অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে সুস্থ অবস্থায় প্রবেশ করেন, তাহলে কি কারণে এত জটিল দুরারোগ্য ব্যাধিতে তিনি আক্রান্ত হলেন? বেগম জিয়ার রোগব্যাধির ভয়াবহতা এখন চরম পর্যায়ে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থারাইটিসে আক্রান্ত। কারাগারে যাওয়ার পরে যকৃতের রোগ (লিভার সিরোসিস) দেখা দিয়েছে। যে রোগের কারণে তার পোর্টাল হাইপারটেনশন, পেটে ও ফুসফুসে পানি আসা, অন্ত্রের রক্তরক্ষণ হচ্ছে, যার চিকিৎসা এদেশে আর সম্ভব নয় বলে মেডিক্যাল বোর্ড ইতোমধ্যে পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণে নেই। তার হৃদযন্ত্রের অবস্থাও ভয়ানক অবনতির দিকে। ইতোমধ্যে তার হৃদপিন্ডে একটি রিং বসানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি কিডনি রোগের জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে সবমিলিয়ে দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করেছে। বার বার তাকে সিসিইউ-তে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

রিজভী বলেন, জনসমর্থনহীন শাসকগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নিমূর্লের মহাপরিকল্পনায় লিপ্ত। এ ক্ষেত্রে খাবারের মধ্যে বিষ প্রয়োগ থেকে শুরু করে বিচারের নামে প্রহসনের সাজা দেয়া এবং গুম-খুন-গুপ্তহত্যার বিবিধ প্রণালী অবলম্বন করেছে সরকার। বন্দী বেগম জিয়াকে আওয়ামী সরকার সুপরিকল্পিতভাবে খাবারের মধ্যে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *