গাজা উপত্যকায় একযোগে আকাশ, সাগর আর স্থলপথে সর্বাত্মক হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। আট দিন ধরে অবশ্য ইসরাইল ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সেইসাথে সীমান্তে বিপুল সৈন্য ও সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে। ইসরাইলি হামলায় গাজায় গত ২৪ ঘণ্টাতেই নিহত হয়েছে চার শতাধিক।
ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স শনিবার রাতে জানিয়েছে, তাদের ব্যাটালিয়ন ও সৈন্যদের সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছৈ। তারা যুদ্ধের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। তারা স্থল হামলার ওপর ব্যাপক জোর দিচ্ছে।
এদিকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি ওয়াফা নিউজ অ্যাজেন্সি জানিয়েছে, চার শতাধিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি ১৫ শ’র বেশি লোক আহত হয়েছে।
ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২,২১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৮,৭১৪ জন। নিহতদের মধ্যে ৭০০ শিশু রয়েছৈ। পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গেছে।
অন্য দিকে নিহত ইসরাইলির সংখ্যা ১৩ শ’ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া আহত হয়েছে ৩,৪০০।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি অভিযানে ১৩ শ’র ও বেশি ভবন ধ্বংস হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী ইসরাইলি বাহিনীর ভয়াবহ বোমা বর্ষণের পর জাতিসঙ্ঘ শনিবার এ কথা বলেছে।
জাতিসঙ্ঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ বলেছে, ওই ভবন গুলোর ‘৫,৫৪০টি আবাসন ইউনিট’ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরো প্রায় ৩,৭৫০টি বাড়ি এত খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে এগুলো বসবাসের অযোগ্য।
চলমান সংঘাতের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করার সময় শুক্রবার গাজা উপত্যকা এবং ইসরাইলে ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘে নিযুক্তি রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত।
এএফপি’র হাতে আসা নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপিত রাশিয়ান খসড়া প্রস্তাবে ‘অবিলম্বে’ একটি যুদ্ধবিরতি এবং সমস্ত বন্দীর নিরাপদ মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে এবং ‘বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সমস্ত সহিংসতা, শত্রুতা এবং সব ধরণের সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায়।’
নথিতে বিশেষভাবে শনিবার ইসরাইলে হামলা চালানো হামাসের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এই হামলায় ১,৩০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় প্রায় ১৫০ জনকে আটক করে তারা গাজায় নিয়ে আসে।
যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদকে ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থীদের এবং ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক হামলার জন্য তাদের নিন্দা করার আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে, নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রক্তপাত বন্ধ করতে এবং শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে হবে।’
নেবেনজিয়া বলেন, কিছু সদস্য রাষ্ট্র খসড়া প্রস্তাবের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
তিনি ‘মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান যুদ্ধের দায়ভার’ বহন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও দোষারোপ করেছেন এবং ‘গাজা উপত্যকায় বেসামরিক স্থাপনায় ইসরাইলি বিমান বাহিনীর হামলার প্রতি অন্ধ দৃষ্টি দেওয়ার জন্য’ ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেয়নের সমালোচনা করেছেন।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদ নিয়মিত বিভক্ত। সভার পরে সদস্যরা প্রস্তাবের বিষয়ে সতর্কতার সাথে কথা বলেন।
ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা কাউন্সিলের বৈঠকে যাওয়ার মাত্র দুই মিনিট আগে খসড়া প্রস্তাবটি হাজির করা হয়েছিল।’
‘আমি মনে করি এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছুর জন্য, আমরা ইতোমধ্যেই দেখেছি যে মানুষের জীবন কতটা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের পরামর্শের জন্য সময় দরকার।’
চীনা রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেছেন, ‘মানবিক উদ্বেগের বিষয়ে একটি উদীয়মান ঐকমত্য রয়েছে। উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে এমন সকল উদ্যোগের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’
সূত্র : আল জাজিরা, জেরুসালেম পোস্ট, এএফপি এবং অন্যান্য