খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপির অনশন কর্মসূচির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন— আজকে দেখি, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিএনপি নেতারা অনশন করে। আমি জিজ্ঞেস করি, তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছিল? বাসায় কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে? বাড়িতে কী দিয়ে ভাত খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করারও একটা সীমা থাকে। (তারা) এই নাটকই করে যাচ্ছে।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর কাওলায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। গত শনিবার (৭ অক্টোবর) এই সভা হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তারিখ পরিবর্তন করা হয়।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা নাকি আমাদের উৎখাত করে দেবে। সময় দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে? যে সরকার জনগণের রায় নিয়ে বারবার নির্বাচিত হয়েছে। দেশের মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না।’
বিএনপির দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অর্থপাচারের কারণে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই সময় মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে বিদেশে পালিয়ে যায়। যে নাকি জীবনে আর রাজনীতি করবে না। কিন্তু যে টাকা সে পাচার করেছে, সেই মামলায় এফবিআই সাক্ষ্য দিয়ে গিয়েছিল। সে ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তাদের ব্যবসা ছিল অস্ত্র চোরকারবারি, অর্থ পাচারকারী।’
বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার (তারেক রহমান) মা-তো অসুস্থ। আপনারা অনশন করেন। তাহলে ছেলে কেন মাকে দেখতে আসে না। এটা কেমন ছেলে, সেটা আমার প্রশ্ন। মা-তো অসুস্থ মরে মরে। সে নাকি যখন তখন মরে যাবে…। হ্যাঁ, বয়সও হয়েছে, অসুস্থতো বটে। মাকে দেখতে আসে না কেন? আমিতো বলবো, মাকে দেখতে আসুক।’
বিএনপি ভোট কারচুপি করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনেক সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গণতান্ত্রিক ধারা থাকলে পরে একটা দেশের উন্নতি হয়, আর গণতান্ত্রিক ধারা যারা বিশ্বাস করে, তারা ক্ষমতায় থাকলে দেশের যে উন্নয়ন হয়, সেটা আজকে প্রমাণিত।’
২০০১ সালে দেশের সম্পদ বিক্রির মুসলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব আমার কাছেও এসেছিল। বলেছিলাম, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে দেশের স্বার্থ কখনও বেচি না। ক্ষমতার লোভ আমার নেই। খালেদা জিয়া এসে গ্যাসতো দিতেই পারেনি, উল্টো বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করেছে। আর বিদেশ থেকে টাকা এসেছিল এতিমখানার জন্য, এতিম একটা টাকাও পায়নি, সব টাকা মেরে দিয়েছে নিজে।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে কানাডার পুলিশ এবং আমেরিকা থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক আসার জন্য তৈরি। যখনই তারা আসবে বলে, তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
‘খালেদা জিয়া ক্ষমতা থাকতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছিল’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতে সে বলেছিল— আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বলেছিল, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরে থাক— বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারবে না। আল্লার মাইর দুনিয়ার— এখন তিনি না প্রধানমন্ত্রী, না বিরোধী দলীয় নেত্রী কিছু হতে পারেননি। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’
তিনি বলেন, ‘তার বড় বোন, বোনের জামাই, ভাই আমার সঙ্গে গণভবনে দেখা করতে আসে। কান্নাকাটি করে। সরকারপ্রধান হিসেবে আমি যতটুকু ক্ষমতা… যদিও ক্ষমতায় থাকতে আমাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা, বারবার হামলা করেছিল। যখন সে এক-একটা বক্তৃতা দিয়েছে, তারপরেই হামলা হয়েছে। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে। নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে রক্ষা করেছে। আমি তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির প্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রাম জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার এবং জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি সংগ্রামে আপনারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছিল, আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ওই ভোট চুরির অপরাধে… এদেশের মানুষ ভোট চোরাকে কখনও ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। সেই অপরাধে তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে মাত্র দেড় মাসে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই আন্দোলন আপনারাই চালিয়েছিলেন। সে জন্য আপনাদের সংগ্রামী অভিনন্দন জানাই।’
জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি ব্যবস্থার উন্নতি করেছি। যে বিএনপি ২০০১-০৬ সালে ক্ষমতায় থাকতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট করেছিল। সেটি সরিয়ে দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালানার জন্য আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি— যাতে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি প্রমুখ।