রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালায় ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত পুষ্পদাম রিসোর্ট। এ রিসোর্টটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। রিসোর্টের ভেতর দীর্ঘদিন যাবৎ অসামাজিক কার্যকলাপ চালানোর প্রমাণ পেয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত বুধবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেন গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মুরাদ আলী।
এর আগে (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জয়দেবপুর থানা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল কোর্ট টিম এই অভিযান পরিচালনা করেন। মোবাইল কোর্টের উপস্থিতি টের পেয়ে পুষ্পদাম রিসোর্টের ভেতরের বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে পুরো রিসোর্ট এলাকায় অন্ধকার নেমে আসে। এই সুযোগে রিসোর্টে কর্মরত লোকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
পরে মোবাইল ফোনের ফ্লাশলাইট ব্যবহার করে
রিসোর্টের ভেতরে থাকা আবাসিক ভবনগুলোতে পুলিশ তল্লাশি চালায়। এ সময় ভবনের বিভিন্ন কক্ষে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা ৪ জন ছেলে এবং ৪ জন মেয়েসহ মোট ৮ জন হাতেনাতে আটক হয়। আটক হওয়া ৮ জনই প্রাপ্ত বয়স্ক নরনারী। তাই ভবিষ্যতে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত না থাকার লিখিত হলফনামায় স্বাক্ষর রেখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট।
রিসোর্টটির একজন কর্মচারী আলীর সঙ্গে পরিচয় গোপন করে কথা বলেন কয়েকজন সংবাদকর্মী। আলী জানান, প্রতি রাতে রুম ভাড়া ৫০০০ টাকা। মেয়ে তারা দিলে আরো ৪০০০ টাকা। দিনের বেলায় যদি কেউ কম সময় থাকে তাহলে মেয়ে তারা দিলে তাদের রেট ৭০০০ টাকা। এছাড়া কেউ প্রেমিকা নিয়ে আসলে প্রতি ঘন্টায় ২০০০ টাকা করে তারা নিচ্ছে। প্রশাসনিক ঝামেলা আছে কি না, জানতে চাইলে একজন সিকিউরিটি বলেন, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ প্রতি প্রতি মাসে ডিবি এবং থানা পুলিশকে এক লাখ টাকা করে দিচ্ছে। তাই কোনো পুলিশি ঝামেলাও নেই।
টানা কয়েক দিনের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুষ্পদাম রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও কয়েক দফা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সাময়িক ভাবে রিসোর্ট সীলগালা করা হয়েছে। কিন্তু কিছু দিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হয়েছে এবং শুরু করেছে অসামাজিক কার্যকলাপ। দিনেদুপুরে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও নিয়মিত এই রিসোর্টটিতে এসে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। এতে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক গণমাধ্যমে এ নিয়ে রিপোর্ট হরেও অজানা কারণবশত এটা সাময়িক বন্ধ হলেও কয়েকদিন পরই পূণরায় চালু করে। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার মাধ্যমে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাজী মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, রিসোর্টে অবৈধ কার্যকলাপ চলায় এলাকায় মাদকসেবিদের আনাগোনা বেড়েছে। সেই সাথে ভাসমান পতিতা-দের আনাগোনাও রয়েছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এবং উঠতি বয়সী তরুণ তরুণীরাও জড়িয়ে পড়ছে রিসোর্টের পাতা ভয়াবহ ফাঁদে। ফলে এই এলাকায় সামাজিক অবক্ষয় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, এলাকায় বহিরাগত খদ্দের বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। চুরির ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। বহিরাগত মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। আমরা নিরাপত্তা চাই। এসব খারাপ কাজ বন্ধ হলে আমরা স্বস্তি পেতাম। এলাকার সচেতন মহল পুষ্পদাম রিসোর্টের অসামাজিক কার্যকলাপ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গত তিন বছর আগে (২৯ মে ২০২০) তারিখে পুষ্পদাম রিসোর্টে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকায়, নারী পুরুষ ও দালাল সহ ১১ জনকে গেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছিল জয়দেবপুর থানা পুলিশ। ওই ১১ জনের মধ্যে চারজন পুরুষ, চারজন মহিলা এবং তিন জন দালাল ছিল।
এসব বিষয়ে পুষ্পদাম রিসোর্টের মালিক শামসুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে তবে পরিচালক জাহিদুল আলম খোকন রিপোর্ট না করার জন্য অনুরোধ জানান।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পরদিন- মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ফের রিসোর্টটি চালু করার খবর পাওয়া গেছে।
গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মুরাদ আলী জানান, জেলা প্রশাসক গাজীপুর’ এর নির্দেশে এই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। পুষ্পদাম রিসোর্টটি অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এটি বন্ধ থাকবে। অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।